শেষের চাপ সামলাতে পারলো না শেয়ারবাজার
লেনদেনের বেশিরভাগ সময়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি মূল্যসূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে দিনের লেনদেনের শেষ সময়ে তা আর অব্যাহত থাকেনি। শেষ ঘণ্টায় এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের বিক্রির প্রবণতা এতটাই বেশি ছিল যে সেই চাপ সামলাতে পারেনি শেয়ারবাজার। ফলে লেনদেন শেষে দরপতনের তালিকায় নাম লিখিয়েছে অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে কমেছে মূল্যসূচক।
বুধবার (১ মার্চ) লেনদেনের শেষ সময়ে বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। অবশ্য লেনদেনের প্রথম কয়েক ঘণ্টাতেও কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য ছিল। তবে শেষ ঘণ্টার লেনদেনের আগে এই সংখ্যা ছিল একশ’র নিচে। কিন্তু শেষ ঘণ্টার বিক্রির চাপে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় দুইশতে ঠেকেছে।
শেষ ঘণ্টার বিক্রির চাপে মূল্যসূচকের পতন হলেও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন বেড়ে সাড়ে চারশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস চারশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।
শেষের বিক্রির চাপে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্যসূচকের পতন হলেও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। আর দাম বাড়া ও কমার তালিকায় সমান সংখ্যক প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে। এর মাধ্যমে সিএসইতে টানা তিন কার্যদিবস মূল্যসূচক বাড়লো।
এর আগে শেয়ারবাজারে টানা পাঁচ কার্যদিবস দরপতন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার মতিঝিলে অবস্থিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আগের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’র ব্যানারে বিনিয়োগকারীদের একটি দল ব্রোকারেজ হাউজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে এক ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এই প্রতিবাদ জানান।
এরপর বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১২ দফার একটি স্মারকলিপি দেন। এতে শেয়ারবাজার গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার উল্লেখ করে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট শেয়ারবাজার গঠনের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে অপ্রদর্শিত আয় বিনা শর্তে ৫ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এছাড়া স্বল্প সুদে বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেওয়ার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি লভ্যাংশের ওপর সম্পূর্ণভাবে ট্যাক্স প্রত্যাহার করা, তালিকাভূক্ত কোম্পানি এবং অ-তালিকাভূক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা এমন প্রতিবাদ জানানোর পর সোম ও মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মেলে। টানা দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে লেনদেনের গতি। ১৫ ফেব্রুয়ারির পর ডিএসইতে মঙ্গলবার প্রথম চারশ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মেলে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার লেনদেনের শুরুতেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। এতে লেনদেন শুরু থেকেই ডিএসই’র প্রধান সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম তিন ঘণ্টাজুড়েই সূচকের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। এতে লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু শেষ ঘণ্টার লেনদেনে হঠাৎ করেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ি দেন। এতে দেখতে দেখতে বাজারের চিত্র বদলে যায়। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় নাম লেখাতে থাকে। এমনকি বিক্রির চাপে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৬৮টি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮০টির। আর ১৮২টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে। যার মধ্যে ১৫৫টি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। আর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে।
দরপতনের তালিকা বড় হওয়ায় ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২১৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় এক পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে দুই কার্যদিবস সূচক বাড়ার পর ডিএসইতে পতন হলো।
সবকয়টি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত ১২ ফেব্রয়ারির পর ডিএসইতে আবার সাড়ে চারশ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিললো।
টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৩১ লাখ টাকার। ২০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রি, এডিএন টেলিকম, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, জেমিনি সি ফুড, রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন এবং ওরিয়ন ইনফিউশন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪০টির এবং ৫৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এমএএস/কেএসআর/এএসএম