শহরে দরিদ্র মানুষের ৫১ শতাংশই নতুন: বিআইডিএস

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ১৭ মে ২০২৩

দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। আর হতদরিদ্রের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং হতদরিদ্র ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে এখন শহরে মোট দরিদ্রের ৫১ শতাংশই নতুন।

এদিকে করোনার সময় দরিদ্র্য বাড়লেও পরবর্তীসময় তা কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে এটা চলে আসে স্বাভাবিকের জায়গায়। শুধু ঢাকা শহরে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ এ দরিদ্র মানুষ কমেছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। একই সময় অতিদরিদ্র মানুষ কমেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ঢাকায় দরিদ্র মানুষ কমার অন্যতম কারণ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

আরও পড়ুন: দারিদ্র্য কমলেও বেড়েছে আয় বৈষম্য

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। বুধবার (১৭ মে) রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে রিসার্চ অ্যালমানাক-২০২৩ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এ তথ্য প্রকাশ করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার। গবেষণার নাম ‘আরবান প্রভার্টি ডায়নামিক ডিউরিং কোভিড-১৯: অ্যানাটমিক অব রেজিলিয়েন্স’।

গবেষণার প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় ড. বিনায়ক সেন বলেন, করোনার সময় দারিদ্র্য বাড়লেও এটা ছিল সাময়িক। যা পরবর্তীতে কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে স্বাভাবিকের জায়গায় চলে যায়। এ দরিদ্র কমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেলফ ইমপ্লয়মেন্ট, স্থানান্তর, ফিন্যান্সিয়াল সেভিংস, অর্থাৎ সঞ্চয় ভেঙে খাওয়া এবং ডিজিটাল ইকোনমি।

আরও পড়ুন: জাতিসংঘের দারিদ্র্য নির্মূল জোটে যোগ দিল বাংলাদেশ

প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনার শুরুর দিকে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ ছিল। তবে ২০২২ সালের শুরুতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ঢাকা শহরের কমে আসে দারিদ্র্য। ২০১৯ এবং ২০২২ এর মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে চরম দরিদ্র পরিবারের অনুপাত ও ৩ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট কমে গেছে।

গবেষণায় বলা হয়, ২০২২ সালে মোট শহরে দরিদ্রদের মধ্যে (যাদের সামগ্রিক ঘটনা হ্রাস পাচ্ছে), ৫১ শতাংশ নতুন। দুই হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে বিআইডিএস এই গবেষণা করে। এতে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর তা বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন: গুলশানে দারিদ্র্য কম, বেশি চর রাজিবপুরে

এছাড়া ২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করতো। করোনার পর অর্থাৎ ২০২২ সালে এটা বেড়ে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। যদিও তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। করোনার আগে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবারের ব্যাংক হিসাব ছিল। পরে বেড়ে হয়েছে ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

অন্যদিকে অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে এমএফএস ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। ২০১৯ সালে এসব পরিবারের মধ্যে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করতো। করোনার পর বেড়ে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়েছে। এই ধরনের অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রবণতা বাড়েনি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আগে মানুষ এত ছিল যে, তখন বৈষম্য নিয়ে চিন্তা ছিল না। এখন সবাই খেতে পারে। এ কারণে বৈষম্য নিয়ে কথা আসছে। আমরা সম্পদ সৃষ্টি করতে চাই। ভাত, মাছ, মাংস, ডিমের মতো সম্পদ গড়তে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। সম্পদ যখন সৃষ্টি হয় তখন বৈষম্য দেখা দেয়। কারণ কেউ মেধার গুণে বা যোগ্যতার ভিত্তিতে বেশি সম্পদ সৃষ্টি করে।

ড. শামসুল আলম বলেন, করোনার সময় দরিদ্র বেড়েছিল এটা ঠিক। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং উদ্যোগে দারিদ্র নিয়ন্ত্রণ বা কমানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে বিভিন্ন উৎপাদমুখী শিল্প কারখানা বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতির প্রভাব পড়েনি।

এমওএস/জেডএইচ/বিএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।