ডিজির অনুরোধে প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘না’, কর্মবিরতি চলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫১ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন

লাগাতার কর্মবিরতিতে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। একই সঙ্গে তিনি আসন্ন বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন না করতে শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ করেছেন।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষকরা ডিজির অনুরোধে সাড়া দেননি। গত ১২ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে তিন দফা দাবি পূরণে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাতে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান ও মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তারা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজি শামসুজ্জামানের সঙ্গে পরিষদের নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে সশরীরে পরিষদের আহ্বায়ক খাইরুন নাহার লিপি উপস্থিত ছিলেন। আর অন্য আহ্বায়কদের মধ্যে আবুল কাশেম, মাহবুবর ও শামছুদ্দিন ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে- এমন প্রশ্নে আহ্বায়ক মাহবুবর জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। ডিজি স্যার আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন না করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা তার আহ্বানে সাড়া দিতে পারিনি। আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো বলে তাকে অবহিত করেছি।’

আরেক আহ্বায়ক শামছুদ্দিন বলেন, ‘ডিজি স্যার জানিয়েছেন, গ্রেড উন্নীতকরণসহ অন্যান্য দাবি বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে। পে-কমিশন এটা নিয়ে কাজ করছে। আমরা বলেছি, পে-কমিশনের সঙ্গে আমাদের দাবির সম্পর্ক নেই। অর্থ বিভাগের সচিব আমাদের জানিয়েছেন, সরকার ইতিবাচক হলে এ দাবি একদিনে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ফলে আমরা চাই, সরকার শিক্ষকদের দাবি দ্রুত পূরণ করুক। তা না করলে আন্দোলন চলবে। বার্ষিক পরীক্ষাও বর্জন করা হবে।’

ডিজির অনুরোধে প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘না’, কর্মবিরতি চলবে

তিনি বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা বাড়লে পড়ালেখার মান আরও বাড়বে। আমরা মনে করি, বার্ষিক পরীক্ষা এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেলেও পরে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু আমাদের দাবি এখন বাস্তবায়ন না করলে এটা ঝুলে যাবে। প্রয়োজনে আমাদের আবার অর্থ বিভাগের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসার ব্যবস্থা করতে ডিজিকে অনুরোধ জানিয়েছি।’

সহকারী শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো- দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। তবে সরকার দশম গ্রেড দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়ে আপাতত ১১তম গ্রেডের সুপারিশ করেছে। শিক্ষকরাও আপাতত সেই প্রতিশ্রুতির (১১তম গ্রেড দেওয়ার) বাস্তবায়ন দাবি করেছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সহকারী শিক্ষক। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। আর সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তারা এ নিয়ে অসন্তুষ্ট। গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।

এদিকে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ডিসেম্বরের শুরু থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী কোনো অঞ্চলে ১ ডিসেম্বর আবার কোথাও ২ ডিসেম্বর পরীক্ষা শুরু হবে। তবে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে যথাসময়ে এ পরীক্ষা শুরু করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এএএইচ/একিউএফ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।