ডাটা অপারেটরদের দিয়ে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব বাতিল চান শিক্ষকরা

উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ‘সহকারী ইন্সট্রাক্টর’ পদ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে তারা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। শিক্ষকরা বলছেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের তুলনায় প্রাথমিক শিক্ষকরা পাঁচ গ্রেড ওপরে চাকরি করেন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকদের মান-মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে। তাই এই প্রস্তাব বাতিলসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি।
এছাড়া সহকারী শিক্ষকদের ১০ম, প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেড প্রদান, সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিহীন বৈষম্য বাতিল, প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল জটিলতা নিরসন, পদোন্নতিতে জটিলতা কমানোর দাবিতে ১৮ মে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবেন শিক্ষকরা। এরমধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলেও পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শনিবার (৮ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকা রিপার্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম তোতা। লিখিত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. গাজীউল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের প্রাথমিক শিক্ষকরা আজ একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ‘সহকারী ইন্সট্রাক্টর’ পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার একটি প্রস্তাব গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ নিয়ে প্রাথমিকের শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। ইউআরসির সহকারী ইন্সট্রাকটররা প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন, অথচ ইউআরসির ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের তুলনায় প্রাথমিক শিক্ষকরা পাঁচ গ্রেড ওপরে চাকরি করেন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক শিক্ষকদের মান-মর্যাদা চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হবে।
শিক্ষকরা বলেন, একাডেমিক সুপারভাইজারের পদধারীরা সাধারণত বিএড, এমএড ডিগ্রিধারী হয়ে থাকেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী ইন্সট্রাক্টররা একাডেমিক সুপারভাইজার হিসেবে প্রাথমিক স্কুলের শ্রেণি পাঠদান ও প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ তত্ত্বাবধান করে থাকেন। অন্যদিকে ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা একাডেমিক পদধারী কর্মচারী না। তাই তাদের কোনোভাবেই ‘একাডেমিক ট্রেইনার বা সুপারভাইজারে’ পদে চলতি দায়িত্ব বা পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
ইউআরসি সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে যদি পদোন্নতি দিতে হয় তাহলে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্য থেকে আগে পদোন্নতি দিতে হবে বলে দাবি জানান শিক্ষক নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একজন প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড ১১তম এবং সহকারী শিক্ষকের ১৩তম। আর ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের পদ ১৬তম গ্রেডের।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ৫ দফা দাবি
১. সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত, না কি পদোন্নতিপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না প্রশিক্ষণবিহীন এসব বৈষম্য দূর করা এবং প্রধান শিক্ষকদের টাইমস্কেল প্রাপ্তির সব জটিলতা নিরসন করা।
২. ইউআরসিতে কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ‘সহকারী ইন্সট্রাক্টর’ পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির প্রস্তাব বাতিল করা।
৩. প্রাথমিক স্কুলকে ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্ট আখ্যা দিয়ে অন্যান্য শিক্ষা বিভাগের তুলনায় ছুটি কমিয়ে দেওয়া বৈষম্যমূলক। অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের মতো ছুটি রেখে প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি নন-ভ্যাকেশনাল হিসেবে গণ্য করা।
৪. পদোন্নতির সব প্রকার জটিলতা নিরসন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদান ও চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন এবং প্রধান শিক্ষকদের সিনিয়রিটি ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদ থেকে পরিচালক পর্যন্ত পদোন্নতি দেওয়া।
৫. বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য অবিলম্বে ৯ম পে স্কেল এবং ৯ম পে-স্কেল ঘোষণার আগেই ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুব্রত রায়, সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরুল হাসান ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী প্রামানিক, মহিলা সম্পাদিকা বাধন খান পাঠান ববি প্রমুখ।
এমএইচএম/জেডএইচ/এএসএম