মবি ডিক: গভীর রহস্যময় অভিযান

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৬:২০ পিএম, ১৫ মে ২০২৫

জনপ্রিয় মার্কিন লেখক হারম্যান মেলভিলের এক অনবদ্য সৃষ্টি ‘মবি ডিক’ বা ‘দ্য হোয়েল’। এটি ১৮৫১ সালে মার্কিন রেনেসাঁর সময়কালে প্রকাশিত ৭২০ পৃষ্ঠার একটি বই। একটি সাদা বিশাল আকৃতির তিমি শিকারকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। উপন্যাসের শুরুটা এমন—‘আমাকে আপনারা ইসমাইল বলেই ডাকুন। পেশায় আমি নাবিক, সমুদ্র আমার ধ্যান-জ্ঞান। সাগরের বিশাল ব্যাপ্তি, অতুল গাম্ভীর্য আর গভীর রহস্যময়তা আমাকে অমোঘ আকর্ষণে টানে, ডাকে হাতছানিতে।’

তিমি শিকারে যাবে বলে ন্যানটাকেট বন্দরে এসেছেন ইসমাইল। পরিচয় হয় বর্বর, নরখাদক কুইকেগের সঙ্গে। জাহাজে নাম লেখান তারা। একদিন রওয়ানা হয়ে যান সাগরের উদ্দেশ্যে। তখন কি তারা জানতেন, সাধারণ তিমি নয়, পেকোডের ক্যাপ্টেন শিকার করতে চান ‘মবি ডিক’ নামের ভয়ংকর এক সাদা তিমি?

মবি ডিকের গল্প তার কেন্দ্রীয় চরিত্র আহাবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। আহাব হলেন হোয়েলিং শিপ পেকোডের ক্যাপ্টেন। তিনি একটি বিশালাকার সাদা তিমির ওপর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কারণ এ তিমি তার হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের অংশ নিয়ে গেছে। এ জন্য তিনি পাগলের মতো সাগরে সেই তিমির অনুসন্ধান করে চলেছেন।

মবি ডিক। সমুদ্রের ত্রাস বিশাল এক সাদা তিমি। শত চেষ্টা করেও কেউ তাকে মারতে পারেন না। শিকার করতে গিয়ে পা হারিয়ে ক্যাপ্টেন আহাব পিছু নিয়েছেন তার। যে করেই হোক মবি ডিককে হত্যা করবেন তিনি। অপরদিকে সমুদ্র ভ্রমণের নেশায় মত্ত তরুণ নাবিক ইসমাইল চড়ে বসলেন তিমি শিকারি জাহাজ পেকোডে। সঙ্গী তার পাগলাটে বন্ধু কুইকেগ।

বিস্মিত হয়ে তারা দেখতে লাগলেন প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদ ক্যাপ্টেন আহাবের কর্মকাণ্ড। ঘটনার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে শিহরণ। সাগরের বুকে ফুটো হয়ে যাওয়া একটা জাহাজে বিনা খাবারে ৯২টি দিন আর নিদ্রাহীন রাত। নিদারুণ সূর্যের আঁচ আর তিমি মাছের হামলায় দিশেহারা হয়ে উঠছিল নাবিকরা।

ক্যাপ্টেন আহাব পারবেন কি মবি ডিককে হত্যা করতে? বাকিটা জানা যাবে বইটি পড়লেই। উপন্যাসে এমন গা শিউরে ওঠা গল্পের বর্ণনাকারী হলেন ওই ইসমাইল নামের নাবিক। উপন্যাসটির অন্যতম জনপ্রিয় প্রথম লাইন—‘আমাকে আপনারা ইসমাইল বলেই ডাকুন।’

মূলত বইটি অদ্ভুত, পাণ্ডিত্যপূর্ণ, মজার, গভীর অর্থবহ এবং আমেরিকার অন্যতম বেস্ট সেলার উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত। উপন্যাসটি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারও খুব প্রিয়। বিশ্বখ্যাত লেখক উইলিয়াম ফকনার নিজে এ উপন্যাসের লেখক নন বলে আফসােস করেছেন। আরেক খ্যাতিমান লেখক ডিএইচ লরেন্স মনে করতেন, পৃথিবীর সাহিত্যে অন্যতম আকর্ষণীয় ও বিস্ময়কর উপন্যাস এটি।

চাইলে আপনিও পড়তে পারেন। বাংলা ভাষায় এর অনুবাদ পাওয়া যাচ্ছে। সালেহা চৌধুরীর অনুবাদে বইটি প্রকাশ করেছে সংবেদ। খসরু চৌধুরীর অনুবাদে প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। অনীশ দাস অপুর অনুবাদে কিশোর উপযোগী করে প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। শিশু-কিশােরদের কাছে এতই জনপ্রিয় যে, এটি নিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র, চিত্রিত বই, কমিক বই, কার্টুন সিরিজ, টিভি সিরিজ নির্মিত হয়েছে।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।