স্বাধীনতা অর্জনে মহানায়কদের অবদান

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫৪ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২২

মো. হাবিবুর রহমান

স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ষা করা সহজ নয় সব জাতি সমানভাবে স্বাধীনও নয়। স্বাধীনতা নামক সোনার হরিণ সবার কপালে জোটে না। স্বাধীনতার মাঝে লুকিয়ে আছে, হাজারো বোবা কান্না ও আর্তনাদের ইতিহাস।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অত্যাচারে যখন এ বসুন্ধরার নানা অঞ্চল তখন জন্ম নিয়েছিল হাজারো কালজয়ী মহানায়ক যুগে যুগে সে সকল গুণীজন, স্ব-জাতির জন্যে দিয়েছে প্রাণবিসর্জন বসুমতিতে আশার বাণী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে-কার্লমাক্স, চেগুয়েভারা ও মার্টিন লুথার কিংসহ অসংখ্য গুণীজন।

এ সকল গুণীজন আন্দোলন, লেখনী ও ভাষণের মাধ্যমে স্বজাতিকে করেছে জাগ্রিত। তারা স্ব-জাতির জন্যে এনে দিয়েছে, স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্র পতাকা তবে এ স্বাধীনতা অর্জন নিতান্তই সহজ ছিল কি? না কি, এ স্বাধীনতার পেছনে ছিল গহীনের শব্দমালা ও না বলা গল্পের সমীকরণ এ স্বাধীনতা অর্জনের মধ্যে লুকায়িত রয়েছে রক্তজবার রংতুলি, ও আত্নত্যাগের ইতিহাস।

স্বাধীনতা অর্জনে কত রত্নগর্ভার মার বুক যে খালি হলো তার সংখ্যায় রয়েছে সাতকাহন ও ঘটনাবহুল ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা তাদের নাম। ফ্যাসিবাদী শক্তি যুদ্ধংদেহি মনোভাব এবং সমরাস্ত্র প্রদর্শন ছিল সবসময় এ পরাশক্তি চায় শুধু ভৌগলিক নিয়ন্ত্রণ ও পতুল সরকারের চক্রাবর্ত তাদের কাছে মানুষ ও শিশু মূল্যহীন এবং নির্জীব পদার্থের মতো ক্ষমতার লোভে তারা হয়ে উঠে মানুষরূপী জানোয়ার ও হায়নার মতন এ হায়নাদের থেকে মুক্তি পেতে, যুগে যুগে প্রয়োজন অনেক মহাপুরুষের যারা শোষিত শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠায় থাকবে বদ্ধপরিকর।

বহিরাগত শাসক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কবলে ছিল এ জনপদ এ ধরণীর বুকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মাথা চাড়া দিয়েছে সব সময় বঙ্গ, গৌঢ়, পুন্ড্র, হরিকেল, ও সমতট জনপদও তার বাইরে নয় যুগপৎ আন্দোলন ও সংগ্রামের বিনিময়ে মুক্ত করতে হয়েছে এক সময় একে একে পতন হলো আরিয়ান, ডাচ, ফরাসি ও বৃটিশদের কালজয়ী মহাপুরুষদের আক্রমণে এ সকল পরাশক্তির পতন ছিল অনিবার্য স্বাধীনতাকামী মানুষদের জন্যে মহাপুরুষরা ছিল প্রেরণাদায়ক ও আলোর প্রদীপ স্বরূপ।

এ বঙ্গ কখনো পরাধীনতার শৃঙ্খল মেনে নেয়নি। বঙ্গকে মুক্ত করতে জাতি দেখেছে হাজারো সূর্য সন্তানের আবির্ভাব কবি, লেখক, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ অবতীর্ণ হয়েছে পাঞ্জেরীর ভূমিকায় তাদের কারণে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী কবি নজরুল ও রবী ঠাকুরের লেখনীতে আন্দোলনকারীদের প্রেরণা যুগিয়েছে সব সময়।

কালজয়ী পুরুষদের প্রতাপে কেঁপেছিল বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পালিয়েছিল দিগ্বিদিক বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত হতে না হতে বঙ্গদেশে শুরু হয় নতুন হায়না ও নব্য সাম্রারাজ্যের শাসন চব্বিশ বছরে যা দিয়েছে তার চেয়ে কেঁড়ে নিয়েছে বহুগুণ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন তখনই আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে বাংলার আনাচকানাচ।

এ সকল কালজয়ী পুরুষ ছিল জাতির জন্য আশির্বাদ স্বরূপ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রতীতি বাস্তবে রুপায়ন
বঙ্গ থেকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বিশ্বের মানচিত্রে আগমন এ জাতিরাষ্ট্র গঠনের পেছনে ছিল অনেক বীর সেনা ও মহাপুরুষের অবদান।

খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার গল্প জাতির জন্যে নান্দনিক মহাকাব্যের আবর্তন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভাব বাংলার আকাশে ছিল নতুন দিগন্ত ও যুগান্তরে প্রবেশ সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর ছিল নানা ঘাতপ্রতিঘাতের ইতিহাস ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সত্তরের নির্বাচন সবত্রই ছিল বঙ্গবন্ধুর ছোঁয়া ও জয়জয়কার।

৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার যেখানে মুক্তিকামী মানুষের জন্যে ছিল নানা পথনির্দেশ বঙ্গবন্ধুর তেজদীপ্ত কণ্ঠে ছিল শোষণ ও বঞ্চনার ইতিহাস তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল- ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর রাজপথের ইতিহাস যে ভাষণে ছিল শহিদের রক্তে রঞ্জিতের ইতিহাস।

বঙ্গবন্ধুর সে ডাকে বাংলার জনপদে, আলোর মশাল প্রজ্বলন করেছে বহু মহাপুরুষ রংপুরকেও মুক্ত করতে দাঁড়িয়ে ছিল নেতা, কবি, ও বহু মুক্তিযোদ্ধা মুখতার ইলাহী ও শংকু সমজদারের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। আপামর জনসাধারণ জেগে উঠেছিল সেদিন অত্যাধুনিক মরণাস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়েছিল পুতুল খেলার বাদ্যযন্ত্র লাঠিশোঠা, তীর, ধনুক, বল্লম, দা, ও কুড়ালের প্রদর্শন অপরাজেয় জাতিকে দমনে শুরু হয়-গণহত্যা ও হরেক রকমের নির্যাতন ক্যান্টনমেন্ট, দখিগঞ্জ, ও দমদমা ব্রীজে পাবে তার নিদর্শন ঘাঘট নদী ও বধ্যভূমিতে ছিল হাজারো লাশের আর্তনাদ ও হাহাকার এ ঘৃণ্যতম দৃশ্যের অবলোকন, প্রকৃতিতে নেমে এসেছিল এক নিঃস্তব্দতা।

বঙ্গবন্ধুর চার সহচর ছিল ইতিহাসের অন্যতম অনুঘটক নজরুল, তাজউদ্দিন, মনসুর ও কামরুজ্জামানের অবদান অপরিসীম। তাদের সকলের অনবদ্য অবদান ও আত্নত্যাগ জাতির জন্য ছিল অমূল্য রতন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন তারা।

চিনু থেকে কবি, নেতা ও দার্শনিক হয়ে উঠা ছিল এ অঞ্চলের জন্যে আশির্বাদ ও জাগরণের গানের মতো মুখতার ইলাহী গণমানুষের মুক্তির জন্যে দিয়েছিলেন প্রাণ বিসর্জন যার পদচারণায় মুখরিত ছিল কারমাইকেল কলেজ প্রাঙ্গণ এ বিদ্যাপীঠের ছাত্র-শহীদ গোলাম নওশা এবং শরিফুলের রক্তের ছোঁয়া রয়েছে স্বাধীনতায় এ শিক্ষাঙ্গনের বিবেক অধ্যাপক সোলায়মান, কালাচাঁদ, চিত্তরঞ্জন, সুনীলবরণ রামকৃষ্ণ ও রহমান বুদ্ধিজীবী দিয়েছেন প্রাণবিসর্জন।

চিনুর রণকৌশল ও পাণ্ডিত্যের রয়েছে নান্দনিক নিদর্শন তার কাব্যে ছিল মা, ও দেশমাতৃকার কথাসহ নানা রূপকথার গল্প মুখতার ইলাহীর শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয় তার দর্শন ও দেশপ্রেম ছড়িয়ে পড়ুক তরুণ প্রজন্মময় তাহলেই তার স্বপ্ন হবে পূরণ এ বাংলায়।

যুদ্ধে সকল বাহিনী ও মানুষের ছিল স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিয়মিত ও অনিয়মিত বাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী ছিল দিশেহারার মতন মুক্তিবাহিনী ও গেরিলার আক্রমণ ছিল বিজলীর মতন অগণিত শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ বাংলাদেশ। জাতি পেল একটি মানচিত্র ও লাল সবুজের পতাকা নিজেকে বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে তাদের অবদানের অন্ত নেই।

বহুগুণে গুনান্বিত এ মহাপুরুষদের ও কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। বাংলার বুকে এ সকল কীর্তিমানের দর্শন হাজার বছর বেঁচে থাকুক। শুধু দিবসের চক্রাবর্তে আটকে না রাখি তাদের অবদান কাজে -কর্মে দিতে হবে তার নিরেট প্রমাণ। তাহলেই স্বাধীনতায় রবে তাদের জয়গান।

লেখক: কলামিস্ট, কবি

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।