সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে অগ্রগ্রাহী ও জেসিআই
‘ওই যে প্রথম রোজায় রোজা রাখসিলাম, হেইবারই (সে বারই) ঘরে আম্মা ইফতার আনসিলো। এরপর রোজা রাখলেও ইফতারে শুধু মুড়ি-গুড়-সিরার (চিড়া) চাইতে বেশি কিসু (কিছু) জুটে নাই।’ রোজকার ইফতার সম্পর্কে বাবা হারানো ১১ বছর বয়সী তুহিনকে জিজ্ঞাসা করতেই তার এমন সোজা-সাপ্টা উত্তর। যেন বর্তমান পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত সংসারগুলোর বাস্তবতাকেই ফুটিয়ে তোলে। শহরের এমন হাজারো তুহিন, হাজারো নিম্নবিত্ত মানুষ এভাবেই রমজান মাসেও তাদের নিত্যদিনের খাবারের চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিদিন। একদিকে দরিদ্রতার কালো থাবা, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের চড়া দাম। সব মিলিয়ে এ রমজানের ইফতার এবং সেহরিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্যের ব্যবস্থা করা এসব অসহায় মানুষের জন্য প্রায় অসম্ভবই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব মানুষ যখন এমন নিষ্ঠুর বাস্তবতার সাথে একা লড়াই করতে করতে ক্লান্তপ্রায়, ঠিক তখনই সমাজ পরিবর্তনে ব্রতী কিছু তরুণ পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আশ্বস্ত করতে চায়। ‘না, এই লড়াই আপনাদের একার নয়, এ লড়াই আমাদের সবার।’ এমনই অদম্য কিছু তরুণ নিয়ে গড়া সংগঠন অগ্রগ্রাহী ফাউন্ডেশন এ রমজানের শুরু থেকেই তাদের ‘রামাদান ফুড ড্রাইভ’ কার্যক্রমের অধীনে প্রতিদিন ইফতার এবং সেহরি বিতরণের মাধ্যমে শহরের নিম্নবিত্ত, স্বল্প-আয়ের দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ছড়িয়ে দিচ্ছে মায়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা। মানবসেবায় সংকল্পবদ্ধ এ তরুণদের বিশ্বাস, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দিনশেষে অভাব নয়, পারস্পরিক ভালোবাসা এবং সহমর্মিতারই জয় হবে।
অগ্রগ্রাহীর শহরজুড়ে ভালোবাসা ও সহানুভূতি বিনিময়ের এ পথচলাকে আরও নির্বিঘ্ন করার জন্য ‘স্নেহের আলিঙ্গন’ নিয়ে ১৫তম রমজান থেকে অগ্রগ্রাহীর সাথে এ কার্যক্রমে যোগ দেয় জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রাম কসমোপলিটান (জেসিআই চট্টগ্রাম)। সমাজের উন্নয়নে, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জেসিআইয়ের অংশগ্রহণ সত্যিকার অর্থেই এ কর্মযজ্ঞে এনেছে নতুন মাত্রা।
জেসিআই চট্টগ্রামের সভাপতি শান শাহেদ বলেন, ‘রহমত এবং বরকতের মাস রমজানেও দারিদ্র্যের কারণে সমাজের অনেক মানুষেরই ইফতার এবং সেহরির নিশ্চয়তা নেই। আমরা চেয়েছি যতটুকু সম্ভব এসব অভাবী মানুষকে সাহায্য করতে। সমাজের অভাবী মানুষগুলোর মাঝে ইফতার বিতরণের মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়াতে আমাদের উদ্যোগ ‘স্নেহের আলিঙ্গন’। অগ্রগ্রাহী ফাউন্ডেশন শুরু থেকেই শহরের নানা প্রান্তে ইফতার এবং সেহরি বিতরণ করে আসছে। এ কার্যক্রমে যুক্ত হওয়াটা সত্যিই আনন্দের। এ বছর পাঁচ দিনের এ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হলেও আশা করছি ভবিষ্যতে আরও কাজ করা হবে। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো অব্যাহত থাকবে।’
অগ্রগ্রাহী ফাউন্ডেশনের রামাদান প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সাদমান জাকির আবীর বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরেই পবিত্র রমজান মাসে চট্টগ্রাম শহরজুড়ে নিম্নবিত্ত মানুষদের মাঝে ইফতার এবং সেহরি বিতরণের মাধ্যমে শহরব্যাপী মায়া এবং ভালোবাসা ছড়িয়ে আসছে অগ্রগ্রাহী। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও আমাদের উদ্যোগ ‘রামাদান ফুড ড্রাইভ’। এ কার্যক্রমে আমাদের প্রতি জেসিআইয়ের সহযোগিতা সত্যিই আমাদের জন্য খুব আনন্দের। এ কার্যক্রমকে আরও সহজ করে তোলার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে জেসিআইয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তাই তাদের প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’
জেসিআই চট্টগ্রাম ও অগ্রগ্রাহী ফাউন্ডেশন এতিম ও পথশিশুদের জন্য গড়া দুটি ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন’ এবং ‘আলোর ঠিকানা’য় এরই মধ্যে প্রথম দু’দিনের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। মাসব্যাপী চলমান ‘রামাদান ফুড ড্রাইভ’ এ বছর চট্টগ্রাম ছাড়া আরও দুটি বিভাগীয় শহর ঢাকা এবং ময়মনসিংহেও পরিচালিত হয়েছে। এ কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই এবারও এ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এসইউ/জিকেএস
