মিরপুরে টিকাকেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি
রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে ভোর থেকেই ভিড় করছেন মানুষ। বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড়ে টিকাকেন্দ্রের আশপাশের অলিগলিতে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ সারি। আজ (শনিবার) শুরু হয়েছে গণটিকা কার্যক্রম। জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে। যারা এখনো প্রথম ডোজের টিকা নিতে পারেননি তারা আজ ভিড় করছেন টিকাকেন্দ্রে।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে যে কয়টি কেন্দ্র থেকে গণটিকা দেওয়া হচ্ছে তার একটি মনিপুর কসমোপলিটন স্কুল। গণটিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় স্থানীয়রা কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউবা আবার একাই এসেছেন টিকা নিতে।
এ কেন্দ্রে টিকা প্রত্যাশী নারী-পুরুষের আলাদা সারি তৈরি করা হলেও অনেকেই মাস্ক ছাড়াই এসেছেন। সারিতে দুজনের মধ্যে নেই নিরাপদ দূরত্ব। অনেক নারীকে নবজাতক শিশুকে কোলে নিয়ে টিকার লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। এভাবে এক থেকে দুই ঘণ্টা লাইনে (সারিতে) দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা পাচ্ছেন না বলে কেউ কেউ অভিযোগ জানান।
গণটিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার সংবাদ জানতে পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় এই স্কুলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন ৩৮ বছর বয়সী গৃহিনী খাদিজা বেগম। মিরপুরের বড়বাগে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। জাগো নিউজকে তিনি জানান, এ পর্যন্ত টিকার কোনো ডোজই নেননি তিনি। টিকা নিয়ে একটু ভয় থাকায় এতদিন নেননি। আজ সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে দুই ঘণ্টা পর প্রথম ডোজের টিকা নিতে পেরেছেন বলে জানান। টিকা নিতে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে আনেন।
১৮ বছর বয়সী মিনারা এসেছেন টিকা নিতে। লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত চার মাস আগে আমার ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। টিকা নিবো নিবো করে নেওয়া হয়নি। পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার পর মিরপুরে বোনের বাসায় থাকি বলে তেমন কোথাও যাওয়া হয় না। আজ এলাকায় টিকা দেবে শুনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দুই ঘণ্টা ধরে তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন বলেও জানান।
নিজের অবহেলায় করোনার টিকা নেননি কলেজ ছাত্রী মৌটুসী ইসলাম। কলেজে নাম নিবন্ধন করেও টিকা নেওয়া হয়নি বলে জানান। বর্তমানে বাসার পাশে টিকা দেবে শুনে এসেছেন। তিনি বলেন, পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই টিকা নিয়েছেন। আমি আর মা টিকা নেইনি। মা অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। ফলে তিনি একাই নিবন্ধন কার্ড নিয়ে টিকা নিতে এসেছেন।
মিরপুর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে কসমোপলিটন, পীরেরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আম্বার শাহ ইসলামি মাদরাসা, বাইতুল সালাম জামে মসজিদ, মিসহাক ইন্ট্যারন্যাল স্কুল ও লিটল ফ্লাওয়্যার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে টিকাকেন্দ্র বসানো হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রথম ডোজের টিকা নিতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
মিরপুর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসমাইল মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, তার অধীনে মিরপুর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ছয়টি কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে মোট সাড়ে চার হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা প্রদান করা হবে। টিকা নিতে ভোর থেকে মানুষ ভিড় করছেন। বিদ্যুৎ না থাকা ও টিকা প্রদানকারী কর্মীরা যথাসময়ে না আসায় একটু দেরি করে এ কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ রয়েছে, রেজিস্ট্রেশন করে টিকা পাননি ও যাদের এসব কোনো কাগজপত্র নেই, শুধু মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে আসলেই তাদের প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকার জন্য অসুস্থ, প্রতিবন্ধী ও নবজাতক শিশু নিয়ে আসা মানুষদের লাইন ছাড়াই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের বারবার মাইকিং করে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হলেও ব্যাপক ভিড় থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
এমএইচএম/কেএসআর/এমএস