যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি

চলতি সপ্তাহেই অজিত দোভালকে রাশিয়া পাঠাচ্ছেন মোদী, যাবেন জয়শঙ্করও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪৫ পিএম, ০৬ আগস্ট ২০২৫
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল (বামে দাঁড়ানো) ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর (মাঝে)/ ছবি: এএফপি

চলতি মাসেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করকে রাশিয়ায় পাঠাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও জ্বালানি আমদানি ঘিরে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারির মধ্যেই ভারতের এই শীর্ষ দুই কূটনীতিকের মস্কো সফরকে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে

জানা গেছে, অজিত দোভাল বুধবার (৬ আগস্ট) মস্কোর উদ্দেশে রওনা হবেন ও বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রুশ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিষয়টি নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত বা রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না এলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সফরটি পূর্ব নির্ধারিত হলেও সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে এর তাৎপর্য অনেক বেড়ে গেছে।

বিশেষ সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দোভালের বৈঠকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভারত বর্তমানে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান জ্বালানি আমদানিকারক, ফলে মস্কোয় আলোচনার মূল বিষয় হতে পারে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার বিষয়টি।

রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাস একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাজরুরি বিষয়সমূহ বিশেষ করে রাশিয়ার তেল সরবরাহ দোভালের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, আলোচনায় ভারতের জন্য কেনা পাঁচটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে বাকি দুটি ইউনিটের সরবরাহ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এছাড়া আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ও কাবুলে তালেবান সরকারের প্রতি রাশিয়ার সাম্প্রতিক স্বীকৃতি নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে রাশিয়া সফরে যাবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। তার সফরটি হবে ভারত-রাশিয়া আন্তঃসরকার কমিশনের (আইআরআইজিসি-টেক) একটি নিয়মিত বৈঠকের অংশ, যা মূলত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

গত বছরের নভেম্বরে এই কমিশনের শেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারতে, এবার হবে রাশিয়ায়। সূত্রগুলোর মতে, যেহেতু এই কমিশনই দুই দেশের বাণিজ্য বিষয়ক যাবতীয় আলোচনা করে, তাই জ্বালানি তেল কেনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শাস্তিমূলক শুল্ক ইস্যুটি এই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাবে।

দোভালের রাশিয়া সফরের একদিন আগেই পুতিন সাক্ষাৎ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে নতুন আলোচনার অংশ হিসেবেই উইটকফ বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ৮ আগস্টের মধ্যে রাশিয়া যদি যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ না নেয়, তবে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

গত কয়েকদিন ধরে ট্রাম্প ভারত ও রাশিয়ার ওপর প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, বিশেষ করে দুই দেশের জ্বালানি বাণিজ্য ও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে। সোমবার ( আগস্ট) এক সামাজিকমাধ্যমে পোস্টে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ভারত বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল কিনছে ও এই অপরিশোধিত তেল বাজারে বিক্রি করে মুনাফা করছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে কতজন মানুষ মারা যাচ্ছে, তা তাদের কোনো বিষয় না।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এই ধরনের হুমকিকে অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক বলে আখ্যা দিলেও, ট্রাম্প মঙ্গলবার সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবারও বলেন, ভারত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপকারী দেশ। তিনি বলেন, আমরা ২৫ শতাংশ শুল্কে স্থির হয়েছিলাম, কিন্তু আমি মনে করছি- আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দেবো। কারণ তারা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে যুদ্ধে সাহায্য করছে

শুক্রবার (৮ আগস্ট) থেকে ট্রাম্প ঘোষিত পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। এমন পরিস্থিতিতে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে রাশিয়ার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় যাওয়া ভারতের জন্য কেবল কৌশলগত নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।