দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

ক্রমেই ভয়ঙ্কর হুমকিতে পরিণত হচ্ছে উত্তর কোরিয়া

মো: শাহিন মিয়া
মো: শাহিন মিয়া মো: শাহিন মিয়া
প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কিম জং উন। ছবি: এএফপি (ফাইল)

উত্তর কোরিয়া ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারও উত্তেজনা বাড়ছে। এই সপ্তাহে দেশটির শাসক কিম জং উন সংসদে বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করেন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান-এর ডাক দিয়েছেন। এমনকি ট্রাম্পও সম্প্রতি কিমের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশংসা করে জানিয়েছেন, চলতি বছর তিনি আবারও কিমের সঙ্গে দেখা করতে চান।

তবে আগের মতো সৌজন্যপূর্ণ বার্তা দেওয়া হলেও পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিম উল্লেখযোগ্যভাবে পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়িয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাও তীব্র করেছেন। তার শাসনব্যবস্থা আরও দমনমূলক হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে নতুন জোট তাকে আরও শক্তিশালী করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র ও সেনা দিয়ে সহায়তা করার বিনিময়ে তিনি খাদ্য, জ্বালানি, প্রযুক্তি এবং চীনের বিপরীতে রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করার সুযোগ পেয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থা লিবার্টি ইন নর্থ কোরিয়ার সোকিল পার্ক বলছেন, দেশটিতে যা চলছে তা হলো উত্তর কোরিয়ার আরও উত্তর কোরিয়াকরণ। ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যর্থ আলোচনার পর এবং কোভিড-১৯ মহামারির সময় এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। মহামারির পরও দেশটি কঠোরভাবে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষ দূত এলিজাবেথ সালমোন জানান, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে উত্তর কোরিয়ার জনগণ প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাস করছে।

বিদেশি কূটনীতিক ও সাহায্যকর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছে, এমনকি জাতিসংঘের কর্মীরাও আর ঢুকতে পারছেন না। দক্ষিণ কোরিয়া থেকেও গত বছর কোনো মানবিক সহায়তা পৌঁছায়নি—যা গত প্রায় তিন দশকের মধ্যে প্রথমবার ঘটলো।

কিম সীমান্তও শক্তিশালী করেছেন। নতুন দেয়াল ও বেড়া তোলা হয়েছে চীন সীমান্তে। ফলে পালিয়ে আসা শরণার্থীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ১ এক হাজার ২০০ জন দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছালেও ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা গড়ে নেমে এসেছে মাত্র ১৫৮-তে। এতে শুধু জনগণের কষ্টই বাড়ছে না, বাইরের বিশ্বও উত্তর কোরিয়ার ভেতরের তথ্য জানতে ক্রমেই অন্ধকারে থাকছে।

তথ্য প্রবেশও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে শাসকগোষ্ঠী। দক্ষিণ কোরিয়ার নাটক, সিনেমা ও গান আগে গোপনে ছড়িয়ে পড়তো। বহু তরুণ-তরুণী এসব দেখে বাইরের বিশ্বের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা পেতেন। অনেকে বলছেন, এসব নাটক তাদের চোখ খুলে দিয়েছিল এবং পালানোর প্রেরণাও জুগিয়েছিল। এ কারণেই কিম এটিকে বড় হুমকি মনে করছেন।

তরুণদের বিশ্বস্ততা ধরে রাখতে কিম একের পর এক আইন জারি করেছেন। ২০২০ সালে বিদেশি তথ্য ছড়ানোর শাস্তিমূলক আইন, ২০২১ সালে বিদেশি পোশাক-চুলের ধরন নিষিদ্ধ করে যুবশিক্ষা আইন এবং ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার কথ্য ভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সাংস্কৃতিক ভাষা সুরক্ষা আইন কার্যকর করা হয়।

সম্প্রতি কিম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পুনর্মিলন চায় না; বরং দক্ষিণকে শত্রু মনে করে। তার দাদা কিম ইল সুং থেকে শুরু করে এতদিন যে একত্রীকরণের কথা বলা হতো, সেখান থেকে এটি বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি দমন করার যৌক্তিকতা দাঁড় করাতেই এমন অবস্থান নেওয়া হয়েছে। ফলে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও এখন দক্ষিণকে অনেক কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।