ভারতের রাজনীতিতে উত্তেজনা

আসলেই কি রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নত জেট ইঞ্জিন পেতে যাচ্ছে পাকিস্তান?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০২ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান/ ছবি: এএফপি

রাশিয়া কি পাকিস্তানকে উন্নত জেট ইঞ্জিন বিক্রি করছে? এই প্রশ্ন নিয়ে এখন উত্তপ্ত ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে। কারণ, দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস দাবি করেছে, দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া নয়াদিল্লির অনুরোধ উপেক্ষা করে চীনে তৈরি পাকিস্তানের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জন্য আধুনিক ইঞ্জিন সরবরাহ করতে যাচ্ছে।

কংগ্রেসের এই দাবি এমন সময় উঠলো, যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৫-৬ ডিসেম্বর ভারত সফর করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে সত্যিই কি এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে?

শনিবার (৪ অক্টোবর) কংগ্রেস দাবি করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেন একসময় ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কৌশলগত মিত্র রাশিয়া এখন ভারতের আপত্তি উপেক্ষা করে পাকিস্তানের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জন্য উন্নত আরডি-৯৩এমএ ইঞ্জিন সরবরাহ করছে।

দলের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান জয়ারাম রমেশ এক্সে লেখেন, জেএফ-১৭ বিমানের সর্বশেষ ব্লক-৩ সংস্করণে এই নতুন ইঞ্জিন ও পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে, যা আমাদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এর সময় ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধানও বলেছেন, জেএফ-১৭ পাকিস্তানের সেই অভিযানে ব্যবহৃত হতে পারে।

রমেশ আরও লেখেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর জুন ২০২৫ সালে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করলেও রাশিয়া-পাকিস্তান ইঞ্জিন চুক্তি এগিয়ে চলছে।

জয়ারাম রমেশ প্রশ্ন তোলেন, যে রাশিয়া এতদিন আমাদের বিশ্বস্ত অংশীদার ছিল, তারা কেন এখন পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে, যখন ভারত নিজেই রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনছে ও সু-৫৭ স্টেলথ ফাইটার নিয়ে আলোচনা করছে? এটি আবারও প্রমাণ করে যে মোদীর ‘ব্যক্তিনির্ভর কূটনীতি’ দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের ভাবমূর্তিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

কংগ্রেসের আরও দাবি, মোদী সরকার পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দলটি বলে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে উষ্ণ আতিথ্য ও ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে অস্ত্র পাচ্ছেন। আবার চীনের পূর্ণ সমর্থনও পাচ্ছেন।

এদিকে, কংগ্রেস এই দাবি তোলার পরপরই বিজেপি নেতা অমিত মালভিয়া একে ‘তথ্যযুদ্ধের অংশ’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগের পক্ষে কোনো সরকারি সূত্র বা বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। এর অল্প সময়ের মধ্যেই রাশিয়াও কংগ্রেসের দাবি নাকচ করে জানায়, পাকিস্তানের জেএফ-১৭ বিমানের জন্য ইঞ্জিন সরবরাহের খবর ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক।

একজন রুশ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম ইয়নকে বলেন, এমন কোনো চুক্তির নিশ্চিত তথ্য নেই। ভারত-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বড় কোনো সামরিক সহযোগিতা শুরু করা যুক্তিসঙ্গত নয়। কেউ ইচ্ছে করে দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করছে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফরের আগে।

ভারতের জন্য বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ

রাশিয়া যদি সত্যিই পাকিস্তানকে আরডি-৯৩এমএ ইঞ্জিন সরবরাহ করে, তাহলে তা হবে নয়াদিল্লি-মস্কোর অর্ধশতাব্দীর কৌশলগত অংশীদারিত্বে বড় আঘাত। গত পাঁচ দশক ধরে দুই দেশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। সম্প্রতি ভারত এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নতুন চালান কেনার আগ্রহও দেখিয়েছে, যা ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।

রাশিয়া যদি সত্যিই পাকিস্তানকে এই ইঞ্জিন দেয়, তা শুধু ভারত-রাশিয়া সম্পর্কে ফাটল ধরাবে না, ইসলামাবাদ নতুন এক অস্ত্র সরবরাহকারী পাবে। বর্তমানে পাকিস্তানের অস্ত্র আমদানি ৬১ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০-২০২৪ মেয়াদে বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ করেছে পাকিস্তান। এর ৮১ শতাংশই এসেছে চীন থেকে, যা ২০১৫–২০১৯ সালের ৭৪ শতাংশ থেকে আরও বেড়েছে।

রুশ বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন বিশ্লেষণ

কিছু প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অবশ্য বলছেন, যদি রাশিয়া সত্যিই পাকিস্তানকে এই ইঞ্জিন সরবরাহ করে, তাহলেও এতে ভারতের কৌশলগত ক্ষতি নাও হতে পারে।

মস্কোর প্রিমাকভ ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষণা বিভাগের প্রধান পিওতর টপিচকানভ ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, এই সমালোচনা ন্যায্য নয়। যদি রাশিয়া সত্যিই জেএফ-১৭ বিমানের জন্য ইঞ্জিন দেয়, তাহলে এতে ভারতের উপকারই হবে। কারণ, এতে প্রমাণিত হবে যে চীন ও পাকিস্তান এখনো রুশ ইঞ্জিনের বিকল্প তৈরি করতে পারেনি।

সূত্র: ফার্স্টপোস্ট

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।