দ্য ইকোনমিস্ট

আফ্রিকার পরবর্তী যুদ্ধ কীভাবে এড়ানো যায়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৬ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: এএফপি (ফাইল)

তিন বছর আগে ইথিওপিয়ার সরকার দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলের শাসক দল টাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ) এর সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করে। ফলে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের মধ্যে অন্যতম একটি সংঘাতের অবসান ঘটে। দুপক্ষের মধ্যে হওয়া চুক্তির আগে যে নৃশংস সংঘাত হয়েছে তাতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে ইথিওপিয়ার স্বৈরাচারী নেতা আবি আহমেদ এসব উপেক্ষা করেছেন এবং টিপিএলএফ এবং টাইগ্রের সশস্ত্র বাহিনীর অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। দেশটির দক্ষিণ সীমান্তে সংঘর্ষ শুরু হচ্ছে। ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী ড্রোন হামলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এগুলো সরকারের ‘নির্মূলের কৌশল’ বলে অভিযুক্ত করেছে টিপিএলএফ।

টাইগ্রেতে আরেকটি যুদ্ধ হবে এক বিপর্যয়কর ঘটনা। এটি আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত, বহু-দেশীয় সংঘাতের অঞ্চলকে তীব্র এবং প্রসারিত করবে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সহিংসতা এবং অরাজকতার ক্ষেত্র তৈরি করবে। এই সংঘাতের একটি বৈশিষ্ট্য হলো বাইরের শক্তির ভূমিকা, যার মধ্যে কিছু উপসাগরীয় রাষ্ট্রও রয়েছে, যারা তাদের প্রক্সিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। উত্তেজনা হ্রাসের সর্বোত্তম সুযোগ আমেরিকা এবং এই বাইরের শক্তিগুলোর কাছে রয়েছে। তাদেরকে অবশ্যই তাদের মিত্রদের যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং আবার আলোচনার জন্য চাপ দিতে হবে।

ইথিওপিয়া ১৩ কোটি মানুষের আবাসস্থল এবং আফ্রিকার সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন ও ভঙ্গুর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি। ২০১৮ সালে আবি আহমেদ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বহুজাতিক ফেডারেশনজুড়ে রক্তাক্ত বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। টাইগ্রেতে নতুন করে সংঘাত ইথিওপিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে যাবে। এটি ইরিত্রিয়াতেও প্রভাব ফেলতে পারে, যা উত্তরে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা একনায়ক ইসাইয়াস আফওয়ারকির পরিচালিত একটি গুলাগ রাজ্য।

আবি আহমেদ ২০১৮ সালে ইরিত্রিয়ার সাথে একটি শান্তি চুক্তি করেন এবং এই প্রক্রিয়ায় নোবেল শান্তি পুরষ্কার জিতে নেন। কিন্তু এখন সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। আবি আহমেদ লোহিত সাগরের প্রবেশাধিকার দখল করতে চান, যা ১৯৯৩ সালে ইরিত্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ইথিওপিয়ার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

অনেকেই এখন ইরিত্রিয়ার বন্দর এবং সম্ভবত ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা নিয়েও নতুন যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন। ইরিত্রিয়ান সৈন্যরা টিপিএলএফ-এর সঙ্গে লড়াই করতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ইথিওপিয়া, টাইগ্রে এবং ইরিত্রিয়ার পাশাপাশি বিস্তৃত সুদান নিজেদের মধ্যেই বর্বর গৃহযুদ্ধের কবলে পড়েছে। এখন বিপদ হলো এসব সংঘাত একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে মিশে যেতে পারে যেখানে থাকবে যোদ্ধা, অস্ত্রের স্রোত এবং শরণার্থীরা।

এই পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে এখনো খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি। যদি শক্তিশালী বহিরাগতরা তাদের প্রভাব ব্যবহার করে তাহলে হয়তো পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। আবি আহমেদ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে (ইউএই) তার সবচেয়ে মূল্যবান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে বিবেচনা করে। গত বছর ইরিত্রিয়া মিশরের সাথে একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চলতি বছর তারা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ব্যস্ত। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র তার উপসাগরীয় মিত্রদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।

আমেরিকান কূটনীতিকরা সংযমের জন্য চাপ দিচ্ছেন। ২০২০ সালে আমেরিকা পরোক্ষভাবে টাইগ্রেতে যুদ্ধের জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছিল। সেপ্টেম্বরে ইথিওপিয়া সফরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফ্রিকা বিষয়ক উপদেষ্টা মাসাদ বুলোস আবি আহমেদকে বল প্রয়োগ করে সমুদ্রে প্রবেশাধিকার অনুসরণ করতে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। আমেরিকা বেশ কয়েকজন টাইগ্রেয়ান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিয়েছে।

আমেরিকা, মিশর, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে যুদ্ধ এড়াতে এবং ২০২২ সালের শান্তি চুক্তি মেনে চলার জন্য ইথিওপিয়া এবং টাইগ্রেকে চাপ দিতে হবে। ট্রাম্প জুন মাসে পূর্ব কঙ্গোর ওপর একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করে এবং গত মাসে কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের মধ্যে একটি চুক্তি করে সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। উভয়ই অসম্পূর্ণ এবং ভঙ্গুর হলেও কিছুই না হওয়ার চেয়ে ভালো। ট্রাম্প আবির পদাঙ্ক অনুসরণ করে নোবেল পুরষ্কার অর্জনে তার ইচ্ছা গোপন করেননি। উভয়েরই মনে রাখা উচিত যে, যুদ্ধ শেষ করার চেয়ে যুদ্ধ শুরু হওয়াটা বন্ধ করাই বেশি সহজ।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।