অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিদের উৎসবে হামলাকারীরা বাবা-ছেলে
অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বলছে, ইহুদিদের একটি উৎসবকে লক্ষ্য করে সিডনির বন্ডাই বিচে গুলি চালিয়ে যারা ১৫ জনকে হত্যা করেছেন তারা ছিলেন বাবা ও ছেলে। এর মধ্যে ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন এবং তিনি একটি ‘গান ক্লাবের’ সদস্য ছিলেন। তার অস্ত্র রাখার লাইসেন্স ছিল। অন্যদিকে তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। খবর বিবিসির।
তবে তারা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক কি না সে বিষয়ে পুলিশ কমিশনার ম্যাল ল্যানিয়ন নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। রোববার বন্ডাই বিচে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে ১০ বছর বয়সী একটি শিশুসহ মোট ১৫ জন মারা গেছেন যাদের বয়স ১০ থেকে ৮৭ বছরের মধ্যে।
পুলিশ বলছে, বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকাহ উদযাপন শুরু উপলক্ষ্যে চলা অনুষ্ঠানে ওই হামলা চালানো হয়েছে এবং তারা এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবেই বিবেচনা করছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই হামলাকে সম্পূর্ণ নৃশংস ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, এতে ইহুদি সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি অং এর সঙ্গে আলাপকালে এই হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইহুদি বিদ্বেষের সঙ্গে কোনো ধরনের আপোষ হতে পারে না- একে অবশ্যই মোকাবিলা ও পরাজিত করতে হবে।
বন্ডাই বিচের হামলাকারীদের মধ্যে যিনি বয়স্ক তিনি বিনোদনমূলক শিকারের জন্য অস্ত্র রাখার লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। পুলিশ কমিশনার ম্যাল ল্যানিয়ন বলেছেন, ওই ব্যক্তির কাছে ‘ক্যাটাগরি এবি লাইসেন্স’ ছিলো যা ওই ব্যক্তিকে লং আর্মস রাখার অধিকার দেয়। ২০১৫ সাল থেকেই এই লাইসেন্স তার ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী অস্ত্র নিবন্ধনের প্রতিটি আবেদন নিখুঁতভাবে যাচাই করে নিশ্চিত করা হয় যে আবেদনকারী ব্যক্তি লাইসেন্স ধারণের উপযুক্ত ও যোগ্য।
নিউ সাউথ ওয়েলস সার্ভিসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির শিকারের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা নির্ভর করে তিনি কোথায় শিকার করতে চান, কোন ধরনের প্রাণী শিকার করতে চান ও শিকারের উদ্দেশ্য কী- এসব বিষয়ে ওপর। এতে বলা হয়েছে, মূলত বিনোদন কিংবা খাওয়ার জন্য প্রাণী শিকারের অনুমতি দেওয়া হয়।
অস্ট্রেলিয়ার বন্দুক আইন
বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ‘গান ল’ বা বন্দুক সম্পর্কিত আইন থাকার কারণে অস্ট্রেলিয়ানরা তাদের দেশকে নিরাপদ হিসেবে গর্ব করে থাকেন। মূলত ১৯৯৬ সালে পোর্ট আর্থার গণহত্যার ঘটনার পর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন অস্ত্র বিশেষ করে অটোমেটেড অস্ত্রের বিষয়ে আইনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
তাসমানিয়ার ওই ঘটনায় তখন ৩৫ জন নিহত হয়েছিল। এখন নিয়মানুযায়ী, একজন ব্যক্তি অস্ত্র রাখতে হলে অবশ্যই তার নিবন্ধিত পারমিট বা লাইসেন্স থাকতে হবে বলে নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে শ্রদ্ধা জানাতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে
নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স বন্ডাই প্যাভিলিয়নে তৈরি করা মেমোরিয়াল সাইটে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য লোকজনকে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি দেখেছি লোকজন সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছে। আমরা কমিউনিটির সদস্যদের এটি করতে উৎসাহিত করছি।
তিনি রক্ত দিতে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষের লাইন দেখেছেন এবং একে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে চাইলে ধৈর্য ধরুন। তবে একে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো হবে এবং এটি ভালো কাজে ব্যবহার করা হবে।
সাংবাদিকরা ক্রিস মিন্সকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে অনেক প্রশ্ন করেন এবং তিনি স্বীকার করেন যে এ বিষয়ক আইনে পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, এজন্য আইনের প্রয়োজন, যার অর্থ হলো সমাজে ব্যবহারিক প্রয়োজন নেই এমন ভীতিকর অস্ত্রগুলো পাওয়া আরও কঠিন করে তোলার জন্য সংসদে বিল আনতে হবে।
তার প্রশ্ন, আপনি যদি কৃষক না হন, কৃষিকাজে জড়িত না হন তাহলে জনগণকে বিপদে ফেলার মতো অস্ত্র আপনার কেন দরকার হবে? ক্রিস মিন্স বলেন, ইহুদি সম্প্রদায়ের তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যে কোনো উৎসব উদযাপনের অধিকার আছে।
নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনির বন্ডাই বিচ অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সুন্দর সৈকতগুলোর একটি। সেখানে রোববার অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ আগেই জানিয়েছিল যে, দুই বন্দুকধারী এই হামলা চালিয়েছে এবং তাদের একজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে।
আরেকজনকে আহত অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। রোববার বিকেলে যখন এই সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে তখন সেখানে হাজারেরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
টিটিএন