ভারত

চিকিৎসকের হিজাব টেনে খুলে ফেললেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০২ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সরকারি অনুষ্ঠানে এক নারী চিকিৎসকের মুখ থেকে হিজাব টেনে খুলে ফেলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার/ ছবি: এনডিটিভি

ভারতের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দশমবার শপথ নেওয়ার এক মাসের মাথায় ফের বিতর্কে জড়ালেন নীতিশ কুমার। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানী পাটনায় আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে এক নারী চিকিৎসকের মুখ থেকে হিজাব টেনে খোলার ঘটনায় তার মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো।

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ৭৪ বছর বয়সী জেডিইউ প্রধান নীতিশ কুমার এক সরকারি অনুষ্ঠানে এক আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, যোগ ও ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি) চিকিৎসকের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিচ্ছিলেন। সে সময় তিনি ওই নারী চিকিৎসককে ইশারায় হিজাব সরাতে বলেন। নারী চিকিৎসক কিছু বোঝার আগেই নীতিশ নিজেই হাত বাড়িয়ে তার হিজাব খুলে দেন, যাতে তার মুখ ও থুতনি দৃশ্যমান হয়ে পড়ে।

ভিডিওতে পেছনে উপস্থিত কয়েকজনকে হাসতে দেখা যায়। একই সঙ্গে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীকেও নীতিশকে থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।

ঘটনাটিকে ‘ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করেছে কংগ্রেস। অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে, এটি কি তার মানসিক অবস্থার অবনতির প্রমাণ নয়?

আরজেডি তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে হিন্দিতে লিখেছে, নীতীশজির কী হয়েছে? তার মানসিক অবস্থা এখন সম্পূর্ণ করুণ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আরজেডির মুখপাত্র ইজাজ আহমেদ বলেন, এক মুসলিম নারী চিকিৎসকের মুখ থেকে হিজাব টেনে নামানো জেডিইউ-বিজেপি জোটের নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। তার ভাষায়, পর্দা মেনে চলা এক মুসলিম নারীর মুখ থেকে হিজাব সরিয়ে নীতীশ কুমার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নারী ক্ষমতায়নের নামে জেডিইউ ও বিজেপি কী ধরনের রাজনীতি করছে। একজন নারীর হিজাব সরিয়ে দেওয়া মানে তার সংস্কৃতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা অনুযায়ী বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া, যা ভারতীয় সংবিধান সকল নাগরিককে নিশ্চিত করেছে।

কংগ্রেসও মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণকে ‘লজ্জাজনক’ ও ‘ঘৃণ্য’ বলে নিন্দা করেছে। দলের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়, একজন নারী চিকিৎসক নিয়োগপত্র নিতে এসেছিলেন, আর নীতীশ কুমার তার হিজাব টেনে নামালেন। বিহারের সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তি প্রকাশ্যে এমন ঘৃণ্য আচরণ করছেন। ভাবুন তো, রাজ্যে নারীরা কতটা নিরাপদ? এই জঘন্য আচরণের জন্য নীতীশ কুমারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।

এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নীতীশ কুমার। গত নভেম্বরের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এক জনসভায় এক নারীকে মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সে সময় এক জেডিইউ সংসদ সদস্য থামানোর চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রী তাকে ধমক দেন।

এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে জন সুরাজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোরসহ একাধিক নেতা নির্বাচনের আগে নীতীশ কুমারের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তিনি আর শাসন পরিচালনার উপযুক্ত নন। তবে সে সময় এসব মন্তব্য উল্টো ফল দেয় বলে মনে করা হয়। নির্বাচনে এনডিএ জোট ২৪৩ আসনের মধ্যে ২০০টির বেশি আসনে জয় পায়, আর বিরোধী মহাজোট সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে মাত্র ৩৫ আসনে।

নির্বাচনের পর এনডিটিভির সিইও ও সম্পাদক-ইন-চিফ রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত কিশোর নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। তিনি বলেন, এটা বয়সের বিষয় নয়। যদি কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য মনে হয়, আমি সেটা বলবই। এতে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতি হোক বা না হোক, আমি আমার কথা প্রত্যাহার করছি না।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।