ইউরোপে করোনার রেকর্ড সংক্রমণ
ফ্লুবাহিত রোগের মৌসুম ফেরার বেশ আগেই ইউরোপে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। করোনায় বিপর্যস্ত এই অঞ্চলের হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা আবারও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বার ও রেস্টুরেন্ট। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বলে কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়েছে। ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার মানুষের মাঝে কোভিড-বিষণ্নতা তৈরি করছে।
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে রেকর্ড সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় ভাইরাসটির প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তারের গতি চূর্ণ করে দিতে বসন্তে ইউরোপজুড়ে যে লকডাউন জারি করা হয়েছিল তা শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী সফল হয়নি।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদ্রিদে আবারও জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছে স্পেনের সরকার। করোনার নতুন হটস্পট শনাক্তের কাজে সহায়তা করতে সৈন্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে জার্মানি।
বাড়ির বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে ইতালি। ইউরোপে করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠা ইতালিতে দ্রুত হাসপাতালের শয্যা রোগীতে পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোমে চলতি সপ্তাহে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য সেখানকার বাসিন্দাদের ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
গত জুনে করোনার বিদায়ে পার্টির আয়োজন করেছিল চেক প্রজাতন্ত্র। কিন্তু দেশটিতে সম্প্রতি করোনার ভয়াবহ উত্থান ঘটেছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্রে করোনা আক্রান্তের হার সবার ওপরে। দেশটিতে বর্তমানে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হচ্ছে।
কিয়েভ থেকে প্যারিস সর্বত্রই মেডিক্যাল কর্মীরা টানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। রোগীর চাপ অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় অবসরের সময় পাচ্ছেন না তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, গত সাতদিনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং ফ্রান্সে দৈনিক যতসংখ্যক রোগী করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন মাথাপিছু হারে তা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি।
শুক্রবার সাত কোটি মানুষের দেশ ফ্রান্সে রেকর্ড ২০ হাজার ৩০০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণের কারণে বর্তমানে শনাক্তের হার বেশি। প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় বর্তমানে অ্যাসিম্পটোমেটিক রোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক রব বাটলার বলেছেনম আমরা গত ২৪ ঘণ্টায় ইউরোপে রেকর্ড ৯৮ হাজার করোনা সংক্রমণ দেখেছি। এটা নতুন আঞ্চলিক রেকর্ড। যা খুবই আতঙ্কজনক। ইউরোপের অন্যান্য অংশে পরীক্ষা বৃদ্ধি করা হলে ভাইরাসের ভয়াবহ পুনরুত্থানে উদ্বেগ তৈরি হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র ইউরোপে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ ৭৩ হাজার ছাড়িয়েছে; এর মধ্যে শুধুমাত্র ইউরোপেই মারা গেছেন ২ লাখ ২৯ হাজারের বেশি।
সূত্র: এপি।
এসআইএস/এমএস