ফুলে ফেঁপে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চীনের অর্থনীতি
চলতি বছরে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে চীনের আমদানি বেড়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। একই সময়ে বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের রফতানিও ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার চীনের শুল্ক দফতরের প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত বলছে, গত বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে চীনের রফতানি ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার প্রায় কাছাকাছি এবং গত আগস্ট মাসের সাড়ে ৯ শতাংশের চেয়ে কিছু বেশি।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিদেশি অর্ডারের ওপর নেমে আসা আঘাত কাটিয়ে চীনের রফতানিকারকরা এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন; যার প্রমাণ মিলছে শক্তিশালী বাণিজ্যের ধারায় ফেরার এই চিত্র।
বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বীরা যখন উৎপাদনে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে, তখন চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ব বাজারের শেয়ার দখল করতে ছুটে চলেছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনবিষয়ক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভানস প্রিচার্ড বলেন, বড় বিষয় হলো চীনের বহির্মুখী চালান শক্তিশালী রয়েছে। চীনের তৈরি করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী যেমন- মাস্কের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশটির আমদানি বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, আমদানিতে উল্লম্ফনের অর্থ হচ্ছে- দেশীয় বিনিয়োগ ব্যয় এখনও শক্তিশালী রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে পুনরায় শুরু হওয়ায় চীনের কারখানাগুলোর কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে।
কিন্তু চীনের তৈরি সুরক্ষামূলক বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রফতানি দ্রুত পতন ঘটতে পারে বলে কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করে দিয়েছেন।
চীনের শুল্ক দফতরের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চীনের আমদানি ১৩ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; যা গত আগস্ট মাসের চেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বরে দেশটির আমদানি মাত্র ০ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হলেও বাস্তব চিত্র সেটিকে ছাড়িয়ে গেছে।
চীনের ঝংজিয়ুন ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ওয়াং জুন বলেছেন, তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে- দেশে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসায় অর্থনীতিতে সরকারি সহায়তা শুরু হয়েছে। এটি দেশীয় চাহিদা বৃদ্ধি বিশেষ করে বিনিয়োগ-নেতৃত্বাধীন চাহিদার সহায়ক। এটি আমদানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মূল্য বৃদ্ধিও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন ওয়াং। ডলারের বিপরীতে চীনা ইউয়ানের মূল্য গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল শুক্রবার।
শুল্ক দফতরের তথ্য বলছে, চীন গত সেপ্টেম্বর মাসে যেসব পণ্য-সামগ্রী বেশি কিনেছে তার মধ্যে অন্যতম সয়াবিন, শস্য, সেমিকন্ডাক্টর, তামা এবং ইস্পাতের পণ্য। অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় চীনের এই আমদানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
সূত্র: রয়টার্স।
এসআইএস/পিআর