এক বছর ধরে কোমায়, নিজের অজান্তেই দু’বার আক্রান্ত করোনায়
বিশ্বে এক বছরের বেশি সময় ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনা ভাইরাস। এই সময়ের মধ্যে বদলে গিয়েছে চারপাশের পৃথিবী। করোনা এসে সব হিসেব-নিকেশ বদলে দিয়েছে। কিন্তু এসবের কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কারণ এই এক বছর ধরে কোমায় ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, চেতনাহীন অবস্থায় থাকার মধ্যেই দু’বার করোনায় আক্রান্ত হন জোসেফ ফ্ল্যাভিল (১৯)।
২০২০ সালের ১ মার্চ ব্রিটেনের সেন্ট্রাল ইংলিশ টাউনের বার্টন অন টেন্টে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন জোসেফ। তখনও করোনা মহামারি ঘোষণা করেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমনকি সে সময়টায় মাস্কমুক্ত পৃথিবীতেই নিঃশ্বাস নিচ্ছিল ইংল্যান্ডবাসী। এর মধ্যেই মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত তাকে কোমায় ঠেলে দেয়। জোসেফ কোমাচ্ছন্ন হওয়ার তিন সপ্তাহ পর দেশেজুড়ে প্রথম লকডাউন ঘোষণা করে ব্রিটেন সরকার।
ফলে রোগীর আত্মীয়দের হাসপাতালে ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কোমায় থাকা ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে যেতে না পারার যন্ত্রনায় কাতর ছিল জোসেফের পরিবার। ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে হাসপাতালে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেবিনে থাকা ছেলের অসাড় দেহ দেখে আরও কষ্ট পান পরিবারের সদস্যরা। তার চাচি স্যালি ফ্ল্যাভিল বলেন, ‘আমরা জোসেফের নাম ধরে ডাকতাম। ওকে আশ্বাস দিতাম, সাহস যোগাতাম। বলতাম, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। জোসেফ হয়তো সব শুনতে পেত, বুঝতে পারত, কিন্তু কোনও অনুভূতি ছিল না। কোনও সাড়া দিত না।’
এর মধ্যেই দুঃসংবাদ শোনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোমায় থাকাকালীনই জোসেফ করোনা আক্রান্ত হন। একবার নয়, দু’বার। ইংল্যান্ডে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীতে উপচে পড়ে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালটিতেও করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকেই কোনভাবে সংক্রমিত হয়ে পড়েন জোসেফ। একবার নয়, পরপর দু’বার। চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দ্বিতীয়বারও করোনাকে হারিয়ে দিয়েছেন ওই যুবক।
জোসেফ দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার পর থেকে ব্রিটেনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৭৯৮ জনের। জোসেফের অজান্তেই বিগত এক বছরে বাইরের দুনিয়া সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এক বছরের এই দীর্ঘ সময়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা পড়েছে। বন্ধ হয়েছে খেলাধুলা, বিনোদনকেন্দ্র। ভেঙে পড়েছে ব্রিটেনের অর্থনীতি। তবে এসবের কিছুই জানা নেই তার।
দীর্ঘ এক বছরের পরিবর্তিত এই বিশ্ব সম্পর্কে একেবারেই অবগত নন তিনি। এর মধ্যে কিছুটা হলেও চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করেছেন। তার পরিবারের দাবি, ধীরে ধীরে চোখের পলক পড়ছে জোসেফের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুব দ্রুত কোমা থেকে ফিরে আসবেন তিনি। কিন্তু এক বছর পর কেমনভাবে অনুভূতি ব্যক্ত করবেন এই তরুণ? মহামারি কবলিত দুনিয়াকে কিভাবে চিনবেন? এ নিয়েই এখন চিন্তিত তার পরিবার।
টিটিএন/জেআইএম