সংক্রমণের রেকর্ড, অক্সিজেন-ওষুধের সঙ্কটে বিপর্যস্ত দিল্লি
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। গত কয়েকদিনে দেশটিতে একের পর এক সংক্রমণের রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি। এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এটাই সর্বোচ্চ সংক্রমণ।
দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৫শ। অপরদিকে একদিনে করোনা সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে ১ হাজার ৫০১ জন। সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, কর্নাটক এবং ছত্তিশগড়।
গত ২৪ ঘণ্টায় এই পাঁচ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে গত কয়েকদিনে দিল্লিতে টানা সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানী দিল্লি। গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ৩৭৫।
গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে মৃত্যু হয়েছে ১৬৭ জনের। দিল্লির ২৪ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। অর্থাৎ রাজধানীতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন করোনায় আক্রান্ত। যা অত্যন্ত উদ্বেগের।
রাজধানীর করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে কেজরিওয়াল সরকার। সে কারণে কমনওয়েলথ গেমস ভিলেজ এবং বিভিন্ন স্কুলকে কোভিড হাসপাতালে পরিণত করা হবে বলে রোববার এক ঘোষণায় জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
তিনি জানিয়েছেন, যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে এই মুহূর্তে দিল্লির হাসপাতালগুলোর ৯০ শতাংশ আইসিইউতে রোগীর চাপ, অক্সিজেনের পাশাপাশি ওষুধ সঙ্কটও তীব্র হয়ে উঠেছে। করোনা দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে এতদিন হিমশিম খাচ্ছিল দিল্লি এবার রীতিমতো হাহাকার দেখা দিল রাজধানীতে। পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল।
রোববার এক জরুরি বৈঠক শেষে কেজরিওয়াল বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। গত কয়েকদিন আগেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। অথচ এখন সব কিছুই যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেহারে সংক্রমণ বাড়ছে, কেউ জানে না এর শেষ কোথায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক রাজ্যেই স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। সরকার হাসপাতালের বেড বাড়ানোর চেষ্টা করছে। পরবর্তী চারদিনে আরও ৬ হাজার বেড বাড়ানো হবে।’
করোনা রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা কিভাবে দেওয়া যাবে তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সেকারণেই রোববার সকালে জরুরি বৈঠক ডাকেন তিনি। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সতেন্দ্র জৈনও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আপাতত হাসপাতালের অভাব কিছুটা মেটাতে কমনওয়েলথ গেমস ভিলেজ এবং কিছু স্কুলকে জরুরি কোভিড হাসপাতালে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তাতে কি সমস্যার সমাধান হবে কিনা তা এখনও বলা যাচ্ছে না? হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করা গেলেও অক্সিজেন এবং ওষুধের জোগান কিভাবে করা যাবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কেন্দ্রের কাছে এগুলোর সরবরাহ বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে।
একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, দিল্লির পরিস্থিতি এতটাই করুণ যে সব হাসপাতাল মিলিয়ে ৯০ শতাংশ আইসিইউ করোনা রোগীতেই ভর্তি। হাসপাতালের জেনারেল বেডও আর ফাঁকা নেই বললেই চলে। হাসপাতালের বাইরের ওষুধের দোকান হোক কিংবা বেসরকারি কোনও অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকারী সংস্থা কারও কাছেই অক্সিজেন নেই।
টিটিএন/জিকেএস