ডেল্টার আঘাতে ভেস্তে যাচ্ছে চীনের কোভিড জিরো প্ল্যান
লোকভর্তি একটি ফ্লাইট, সিএ-৯১০ গত ১০ জুলাই নানজিং শহরের বিমানবন্দরে অবতরণ করে। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত এক যাত্রী মস্কো থেকে ওই ফ্লাইটে করে নানজিং শহরে যান। তারা যে যার মতো চলে যাবার পর এক কর্মী যথেষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা না নিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন। সেখান থেকেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
চীনের এক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, বিমানবন্দরের ওই কর্মীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, যেটি এখন উহানের চেয়েও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। কয়েক সপ্তাহ আগে অন্তত ১৬ জনের শরীরে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় নানজিং শহরে। এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে বেইজিং, সাংহাই ও উহানের বিভিন্ন শহরে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে আবারও পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছে চীন। কয়েক লাখ মানুষকে আবার পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে, লকডাউন জারি রয়েছে নানজিং শহরে। পরিবহনও বন্ধ করা হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে চলাচল।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর সিঙ্গাপুরের মতো চীনও করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এমনভাবে ছড়াচ্ছে যে তা সুরক্ষা বলয়কে ভেঙে দিচ্ছে। ফলে চীনের কোভিড-১৯ জিরো কৌশল আদৌ কাজে লাগবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
এদিকে, নানজিং এর পূর্বে সংক্রমণ দেখা দেয় গুয়ানডং এবং রাশিয়া ও মিয়ানমার লাগোয়া চীন সীমান্তে। হুনান প্রদেশে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসলেও এখন আবার সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাইরোলজিস্ট অভিযোগ করে বলেন, সরকারের উদাসীনতা এবং সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নেয়ার প্রবণতার কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আবার টিকা দেয়ার পরও ডেল্টা ছড়ানোর কারণে অনেকের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
যদিও চীনের স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, আতঙ্কের কোন কারণ নেই, যেখানে তারা বুস্টার ডোজ দেয়ার কথাও ভাবছে। যদিও এখনও প্রমাণিত নয় যে এসব ভ্যাকসিন এখনও কাজ করছে না।
চীন যদিও ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার হিসাব দেখাচ্ছে কিন্তু কতজন মানুষকে পুরোপুরি ভ্যাকসিনের আওতায় আনা গেছে তা জানানো হয়নি এখনও। তারপর এবার ডেল্টার হানা কিভাবে সামাল দেয় চীন সেটিই এখন দেখার বিষয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মহামারির শুরুতেই সংক্রমণ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয় চীন। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সংক্রমণ কমাতে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় সীমান্ত অঞ্চলগুলো।
করোনাভাইরাসের উৎস আসলে কোথায় তা এখনও অজানা। তবে চীনের উহান থেকেই ছড়িয়েছে এই মারণঘাতী ভাইরাস এমন অভিযোগ উঠলেও বরাবরের মতো তা অস্বীকার করে আসছে দেশটি।
এসএনআর/জেআইএম