পৃথিবীর জন্য দুঃসংবাদ

ওজোন স্তরের ছিদ্রের আয়তন কমেনি, বেড়েছে কয়েক গুণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:১৯ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর। তবে ১৯৮০ সালের দিকে প্রাণীজগতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এ স্তরে একাধিক ছিদ্র ধরা পড়ে। আর এর প্রধান কারণ হলো, মানুষের উৎপাদিত অতিমাত্রার ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (সিএফসি)।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক গবেষণা শেষে বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের ওজন স্তরে হওয়া ছিদ্রটি ২০৩০ সালের মধ্যে সেরে উঠবে, আর অ্যান্টার্কটিকা অংশে হওয়া সবচেয়ে বড় ছিদ্রটি ঠিক হতে সময় লেগে যেতে পারে ২০৬০ পর্যন্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন অ্যান্টার্কটিকা অংশের ছিদ্র তো ভরেইনি, বরং ক্রমেই দানবীয় আকার ধারণ করছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অ্যান্টার্কটিকা অংশের ছিদ্র বড় হতে হতে এক কোটি ৩০ লাখ বর্গমাইল (২ কোটি ৬০ লাখ কিলোমিটার) ছাড়িয়েছে, যা আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম দেশ ব্রাজিলের আকারের অন্তত তিন গুণ।

ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ওজন স্তরের বৃহত্তম ওই ছিদ্রের আয়তন পরিমাপ করা হয়। তাতেই পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ দুঃসংবাদটি পেয়ে যান বিজ্ঞানীরা। তবে তারা ঠিক নিশ্চিত নন, কেন এ বছর ওজোন স্তরের ছিদ্রটি এত বড় হয়েছে।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশ টোঙ্গার উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ভয়াবহ ওই অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকা অংশের ওই গর্ত বড় হওয়ার সংযোগ রয়েছে। কারণ আগ্নেয়গিরির ওই বিস্ফোরণটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু বোমার সমান ও এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিস্ফোরণ।

ইউরোপের কোপারনিকাস অ্যাটমোসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের বিজ্ঞানী ড. অ্যান্টজি ইন্নেস বলেন, ওজোন স্তরের ছিদ্রের আকার নিয়মিতভাবে ওঠানামা করে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর অ্যান্টার্কটিকায় এটি ২ কোটি ৬০ লাখ কিলোমিটার আয়তনে পৌঁছেছে। ধারণা করা হচ্ছে, টোঙ্গা উপকূলে সাগরের গভীরে হওয়া অগ্ন্যুৎপাত এর জন্য দায়ী। কারণ ওই বিস্ফোরণ বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগ স্ট্রাটোস্ফিয়ারে প্রচুর জলীয় বাষ্প ছুড়ে দিয়েছিল। এই জলীয় বাষ্প থেকে প্রচুর সিএফসি তৈরি হওয়া সম্ভব।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০-৩০ কিলোমিটার ওপরে ওজোন স্তরের অবস্থান। অক্সিজেন অণুর এক বিশেষ রংহীন রূপ এই ওজোন। এ স্তরের ঘনত্ব খুব কম হলেও অতিবেগুনি তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রায় ৯৯ শতাংশ শোষণ করে নিতে পারে। এ রশ্মির প্রভাবে দুরারোগ্য ক্যানসার, চোখের ছানি পড়া, প্রজনন ক্ষমতা কমে যওয়া, মানুষের গড় আয়ু হ্রাস, উভচর প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়া, উদ্ভিদের ক্লোরোসিস রোগ, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, খাদ্যচক্রের ক্ষত, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, ওজোন স্তর ১০ শতাংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে ওজোন স্তরের লক্ষ্যণীয় ক্ষতি ধরা পড়ে, আর ২০০০ সাল থেকে প্রতি দশকে ওজোন স্তরের ছিদ্র ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।