বাংলাদেশের ইজতেমা থেকে ফেরার পথে নিজ দেশে হেনস্তার শিকার ভারতীয় ছাত্র

বাংলাদেশের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিয়ে ফেরার পথে নিজ দেশ ভারতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন এক মুসলিম ছাত্র। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ওই ঘটনা জানিয়ে কলকাতায় পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করেছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার বাসিন্দা, এম টেক-এর ছাত্র রেজাউল ইসলাম জানান, দর্শনায় সীমান্ত পেরিয়ে তিনি আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে নদীয়ার গেদে থেকে ট্রেন ধরেন। তাদের গন্তব্য ছিল কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন। যাত্রাপথেই কিছু যাত্রী রেজাউলের ধর্ম নিয়ে এবং বাংলাদেশি বলে কটূক্তি করেন। তাকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয় বলেও পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছেন রেজাউল ইসলাম।
তার অভিযোগ, নদীয়ার রাণাঘাট স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠা একদল যাত্রী প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তার ওপরে এই হেনস্তা চালান।
কী হয়েছিল ট্রেনে?
বুধবার শিয়ালদহ রেল পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরে কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্র বলেন, ইজতেমায় গিয়েছিলাম আমরা চার বন্ধু। মঙ্গলবার সকালে গেদে স্টেশন থেকে আমরা ট্রেনে উঠি। ফাঁকা ট্রেন ছিল, তবে রাণাঘাট স্টেশনে খুব ভিড় হয়ে যায়।
আরও পড়ুন>>
- সব সীমান্ত চুক্তির প্রতি সম্মান দেখানো হবে: বাংলাদেশ প্রসঙ্গে রণধীর জয়সওয়াল
- সীমান্তে এবার ভারতীয় নাগরিককেই গুলি করলো বিএসএফ
- স্বামীর কিডনি বিক্রি করে প্রেমিকের সঙ্গে পালালেন স্ত্রী
‘আমার একটা ট্রলি ব্যাগ সিটের ওপরে বাঙ্কে রেখেছিলাম। সেটা নামিয়ে সিটের নিচে রাখতে বলেন এক যাত্রী। আমি ব্যাগটা নামানোর সময়ে অন্য এক যাত্রী আমাকে ধাক্কা দেন। তারপরেই কটূক্তি করতে থাকেন তিনি। আমি তাকে বলি, এভাবে কথা বলছেন কেন?’ ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন রেজাউল।
তিনি বলেন, এরপরেই ওই ব্যক্তির কয়েকজন সহযাত্রী আমার ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করতে থাকে। তারা বলে, আমি নাকি বাংলাদেশি, আমাদের মতো মানুষই নাকি কলকাতা দখল করে ফেলছে। আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া উচিত, ইত্যাদি। আমি তাদের স্পষ্টভাবে বলি, আমিও ভারতীয়, আপনিও ভারতীয়। দুজনের একই অধিকার রয়েছে এদেশে থাকার। এভাবে কথা বলতে পারেন না আমার সঙ্গে।’
এই ‘অধিকার’ প্রসঙ্গ তোলার পরেই শুরু হয় শারীরিক নিগ্রহ। ‘একজন আমার টুপি মাটিতে ফেলে দেয়, আমার চুল, দাড়ি ছিঁড়ে দেয়। কয়েকজন আমাকে তো চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। তবে যে ভদ্রলোক প্রথমে আমাকে ট্রলি ব্যাগ নামাতে বলেছিলেন, তিনি আমাকে আগলিয়ে রেখেছিলেন,’ জানান রেজাউল।
ঘটনার সময় তার অন্য বন্ধুরা একই কামরার অন্যান্য দিকে বসেছিল। তারাও জানতে পারেনি ঠিক কী ঘটছে তার সঙ্গে।
পুলিশের কাছে অভিযোগ
হুগলীর বাড়িতে ফিরে রেজাউল স্থানীয় থানায় গিয়েছিলেন। তবে ঘটনা যেহেতু অন্য জেলার, তাই সেখানে অভিযোগ দায়ের করা যায়নি।
শারীরিক হেনস্থার ফলে তাকে ডাক্তারের কাছেও যেতে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এ তরুণ।
বুধবার দুপুরে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে রেজাউল ইসলাম শিয়ালদহ রেল পুলিশ থানায় এসেছিলেন। প্রায় দেড় পাতাজুড়ে বিস্তারিত বিবরণ লিখে জানিয়েছেন পুলিশের কাছে। সেখানে তিনি অনুরোধ করেছেন, দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা যাতে করে সকল ধর্মের মানুষ ট্রেনে নিরাপদভাবে চলাচল করতে পারে।
রেজাউলের অভিযোগটি এফআইআর হিসাবে গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছে শিয়ালদহ গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ বা জিআরপি। পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, তারা বুধবার সকালেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন আর তদন্তও শুরু করে দিয়েছেন। এখন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্ত আরও জোরালো হবে।
শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার জে মার্সি বলছেন, তারা অভিযোগটি পেয়েছেন এবং তদন্তও শুরু করেছেন।
মুসলিমদের কটূক্তির ঘটনা বাড়ছে?
মুসলিম সমাজের একাংশ অভিযোগ করছেন, উত্তর ভারতের নানা রাজ্যে মুসলিমদের কটূক্তি নিয়মিত ঘটনা ছিলই। কিন্তু সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গেও এ ধরনের ঘটনা সামনে আসছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ইয়ুথ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিগত দিনেই এ ধরনের ছোটখাটো ঘটনা হয়েছে। কিন্তু পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এখানে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গত এক বছরের ঘটনাবলীর একটা প্রভাবও পড়ছে এখানে। আমি নিজেও দেখছি, ইসলামী পোষাক পড়লেই কটাক্ষ করা হচ্ছে। এর পেছনে এখানকার মিডিয়াও কিছু অংশে দায়ী। তারা যে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে, তার কুফল এগুলো। শিক্ষিত সচেতন হিন্দু ভাইরা যদি এসবের প্রতিবাদ না করেন, তাহলে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়বে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/