সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

১০ লাখ টাকার চেক পেলো ওয়ার্কশপে হাত হারানো শিশু নাঈম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, ০৮ মে ২০২৫
১০ লাখ টাকার চেক হাতে শিশু নাঈম হাসান নাহিদ

ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে হাত হারানো শিশু নাঈম হাসান নাহিদের নামে ১৫ লাখ টাকা করে দুটি ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে এবং তার পড়ালেখার খরচ হিসেবে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে মালিকপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন তা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

সেই নির্দেশনার আলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ১৩ বছর বয়সী নাঈম হাসান নাহিদকে ১০ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন কারখানার মালিক হাজী ইয়াকুব। এর পর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৩ মে দিন ঠিক করেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ শিশুর বাবা ও তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তাকে আজ ১০ লাখ টাকার পে অর্ডার বুঝিয়ে দেন কারখানা মালিকের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৩ মে এ মামলার শুনানি হবে। আশা করি ওইদিন শিশু নাঈম অবশিষ্ট ২০ লাখ টাকা পাবেন। সেদিন কারখানার মালিককেও আসতে হবে।

এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আদালতের আদেশের পরও শিশু নাঈম হাসান নাহিদকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় কারখানার মালিক ইয়াকুবকে তলব করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর শিশু নাঈম হাসান নাহিদকে ৩০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

গত বছরের ১২ জানুয়ারি শিশু নাঈম হাসান নাহিদকে ৩০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই বছরের এপ্রিলের মধ্যে প্রথম ধাপে ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট এবং ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট করে দিতে বলা হয়। আজ ১০ লাখ টাকা দেওয়া হলো।

একই সঙ্গে শিশুটি এইচএসসি পাস না করা পর্যন্ত তাকে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে বলা হয় ভৈরবের নূর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিককে।

১০ লাখ টাকার চেক পেলো ওয়ার্কশপে হাত হারানো শিশু নাঈম

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। তখন আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও অ্যাডভোকেট মো. বাকির উদ্দিন ভূইয়া। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তামজিদ হাসান। তারা বিনা পয়সায় শিশুটির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। তখন ওয়ার্কশপ মালিকের পক্ষে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও আইনজীবী আবদুল বারেক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। এর পর এ সংক্রান্ত বিষয়ে আপিল আবেদন করা হয়। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগের রায়ের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেছিলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওয়ার্কশপ মালিকের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল রইল। হাইকোর্টের রায় অনুসারে শিশুটির নামে মালিকপক্ষ এখনো দুটি ফিক্সড ডিপোজিট করেনি। এমনকি শিশুটির লেখাপড়ার খরচ বাবদ কোনো টাকাও দেয়নি মালিকপক্ষ। আপিল খারিজ হওয়ায় হাইকোর্ট রায় বাস্তবায়নে মালিকপক্ষের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে।

নাঈমকে নিয়ে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। শিরোনাম ছিল ‘ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নাঈমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। তারা বাবা নিয়ামুল হোসেন আনোয়ার পেশায় জুতা ব্যবসায়ী। কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাস করছিল সে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে আনোয়ার কর্মহীন হয়ে পড়েন। সংসারের চাপ সামলাতে নাঈমকে তার মা-বাবা ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে নাঈমের ডান হাত ড্রিল মেশিনে ঢুকে যায়। পরে শিশুটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে তার ডান হাত বিচ্ছিন্ন করেন। সে সময় নাঈমের পরিবার ভৈরবের কমলপুর এলাকার নূর বিল্ডিং নামের একটি ভবনে ভাড়া থাকত। ভবনটির মালিক এলাকার ইকবাল হোসেন ইয়াকুব।

এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।