শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন: আইনজীবী শোয়েবের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ
রাজধানীর গুলশানে দুই শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে ব্যারিস্টার মো. ওমর শোয়েব চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।
শনিবার (২৩ আগস্ট) অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান সভাপতিত্বে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরবর্তী কাউন্সিল সভায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়।
বার কাউন্সিলের সচিব (জেলা ও দায়রাজজ) মোহাম্মদ কামাল হোসেন শিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুই শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় ব্যারিস্টার মো. ওমর শোয়েব চৌধুরী ও তার স্ত্রী সাথী বিরুদ্ধে এক শিশুর বাবা জুয়েল মিয়া রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন।
নির্যাতনের শিকার দুই শিশুর মধ্যে একজনের বয়স ১২ বছর, আরেক জনের ১১ বছর। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, সম্পর্কে তারা ফুপু-ভাতিজি।
২০ আগস্ট মামলার এজাহার আদালতে আসার পর ঢাকার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব এজাহার গ্রহণ করে আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
একইদিন দুই শিশুকে আদালতে হাজির করা হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় আদালত তাদের নির্যাতনের বর্ণনার জবানবন্দি করেন। পরে শিশু দুটিকে পরিবারের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত। যা গত ২১ আগস্ট জানা গেছে।
- আরও পড়ুন
- বিচারককে ঘুস দিতে চাওয়া সেই পিপির সনদ স্থগিত
- সাবেক আইজিপির পর এবার রাজসাক্ষী হলেন এসআই আবজালুল
মামলার অভিযোগে বলা হয়, এক বছর আগে এক শিশুকে ছয় হাজার টাকা বেতনে নিকেতনের ওই বাসায় কাজ দেওয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল, ওমর শোয়েব চৌধুরীর শিশু সন্তানকে দেখাশোনা করতে হবে। ৬ মাস আগে আরেক শিশুকে ওই বাসায় কাজে পাঠায় তার পরিবার।
মাঝেমধ্যে ভিডিও কলে দুই শিশুকে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হতো। তখন তাদের গা-মাথা ওড়নায় ঢেকে কথা বলতে দেওয়া হতো। তবে বড় বোনের বিয়ে উপলক্ষে এক শিশুকে নিয়ে বাড়ি নেওয়ার জন্য ওই বাসার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাবা জুয়েল মিয়া। তখন দুই শিশুকে একসঙ্গে নিয়ে যেতে বলা হয়।
পরে গত ১৭ অগাস্ট দুই শিশুকে জাহিদ হাসান নামে এক ড্রাইভারকে দিয়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে পাঠান ওই বাসার মালিক। তখন তাদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যান জুয়েল। পরে বাড়ি গিয়ে শিশুদের হাত, পা, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য পোড়া, ছ্যাঁকা এবং আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান তারা।
পরে দুই শিশু জানায়, বাসায় কাজে সামান্য ভুলত্রুটি হলেই গৃহকর্তা ওমর শোয়েব চৌধুরী তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. সালাউদ্দিন কাদের সাউন বলেন, ‘দরিদ্র পরিবার, অভাব-অনটনের কারণে মেয়ে দুটোকে গৃহকর্মীর কাজে পাঠিয়েছিল পরিবার। কিন্তু তাদের পা টেপানোর মতো অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হতো। রাজি না হওয়ায় নির্যাতন করা হতো।’
অভিযোগের বিষয়ে ওমর শোয়েব চৌধুরী স্ত্রী সাথী জানিয়েছেন, শিশুদের শরীরে যে দাগ তা আগেই ছিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলায় করা অভিযোগ সত্য নয়।
এফএইচ/এনএইচআর/জিকেএস