হাদি হত্যাকাণ্ড
সীমান্ত পারাপার চক্রের যোগসূত্রসহ আরও যা অভিযোগ ডিবির
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে সীমান্ত পারাপারকারী একটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্ত সংস্থাটি আরও নানা অভিযোগের কথা তুলে ধরে আদালতে। হাদিকে হত্যার পর প্রধান আসামিকে পার্শ্ববর্তী দেশে পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেফতার দুই আসামির রিমান্ড আবেদন করে ডিবি। পরে আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ এই আদেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন।
রিমান্ডে নেওয়া দুই আসামি হলেন—সিবিয়ন দিও (৩২) ও সঞ্জয় চিসিম (২৩)। ডিবির অভিযোগ অনুযায়ী, তারা হত্যাকাণ্ডের পর প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীদের অবৈধভাবে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন।
ডিবির রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের অভিমুখী সড়কে চলন্ত অটোরিকশায় থাকা অবস্থায় শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডিবির দাবি, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার পরপরই প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ তার সহযোগীদের নিয়ে দ্রুত সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যান। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার তথ্য, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং গ্রেফতার দুই আসামির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সীমান্ত পারাপারকারী চক্রের মূল হোতা হিসেবে ‘ফিলিপ’ নামের এক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। ডিবির মতে, এই ফিলিপের নেতৃত্বেই সীমান্ত পারাপারের পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তাকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করা, তার সঙ্গে কিলিং মিশনে কারা যোগাযোগ করেছে এবং এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না— তা উদঘাটনের জন্য আসামিদের পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
ডিবির পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডে অর্থদাতা, পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারীদের চিহ্নিত না করা গেলে মামলার পূর্ণ চিত্র উন্মোচন সম্ভব হবে না। এ কারণে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পুলিশ রিমান্ড জরুরি। শুনানি শেষে আদালত ডিবির যুক্তি বিবেচনায় নিয়ে দুই আসামির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় করা মামলায় দণ্ডবিধির ১২০(বি), ৩২৬, ৩০৭, ১০৯ ও ৩৪ ধারার সঙ্গে ৩০২ ধারা সংযোজন করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিম তদন্ত করছে।
এমডিএএ/এমএমকে/এমএস