মানবতাবিরোধী অপরাধ : ৩ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড, ৫ জনের ২০ বছর করে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৪৭ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

অডিও শুনুন

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ৯ আসামির মধ্যে ৩ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড, ৫ জনের ২০ বছর করে কারাদণ্ড ও আব্দুল লতিফ নামে একজনকে খালাস দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। সদস্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার।

রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার পাঁচজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক চার আসামির একজন সকালে আদালতের বাইরে এসে ধরা দিয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এর আগে ৪১টি রায়ে মোট ১০৩ জনের সাজা হয়েছিল। এদিন ট্রাইব্যুনালের রায়ে ঘোষিত ৪২তম মামলায় ৮ জনের সাজা হয়। এখন পর্যন্ত মোট ১১১ জনের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। ৪২টি মামলার ১১১ জন আসামির মধ্যে এই প্রথম কেউ বেকসুর খালাস পেলেন।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, ঋষিকেশ সাহা, মোখলেছুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী, রেজিয়া সুলতানা চমন ও তাপস কান্তি বল।

jagonews24

আসামি আব্দুল লতিফ, মো. শামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম, মো. রইছ উদ্দিন আজাদী ওরফে আক্কেল আলী ও মো. আব্দুল্লাহর আইনজীবী ছিলেন আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান রায়ের সময় ট্রাইব্যুনালে ছিলেন না।

রায়ে মো. সামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম, এ এফ এম ফয়জুল্লাহ (পলাতক), আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলকে (পলাতক) আমৃত্যু দণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০ বছর করে সাজা দেয়া হয় মো. খলিলুর রহমান, মো. আব্দুল্লাহ, মো. রইছ উদ্দিন আজাদী ওরফে আক্কেল আলী, আলিম উদ্দিন খান (পলাতক) ও সিরাজুল ইসলাম তোতাকে। আব্দুল লতিফকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

মামলার নয় আসামির মধ্যে গ্রেফতার পাঁচজনকে সকাল পৌনে ৯টার দিকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়। রায় ঘোষণার আগে তাদের এজলাসের কাঠগড়ায় তোলা হয়। আদালতের নির্দেশে রায় ঘোষণার শুরুর আগে তারা একে একে নিজেদের পরিচয় দেন।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের প্রাথমিক বক্তব্য উপস্থাপনের পরে সদস্য বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ২২৮ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ থেকে পড়া শুরু করেন। রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি আমির হোসেন। সবশেষে রায়ের অংশ ঘোষণা করেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। তিনি রায়ে কার কী দণ্ড হয়েছে তাও ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল জাগো নিউজকে বলেন, এটিই প্রথম মামলা যেখানে একজন আসামিকে খালাস দিলেন ট্রাইব্যুনাল। আর এটিই প্রথম মামলা যেটিতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি।

jagonews24

প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রসিকিউশন এ মামলার চারটি অভিযোগই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রসিকিউশন রায়ে সন্তুষ্ট। আর ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে এই প্রথম খালাস পাওয়া আসামির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, ‘আসামি আব্দুল লতিফ খালাস পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দুটি অভিযোগ এনেছিল। দুটি অভিযোগে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুট, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যার অপরাধ ছিল। কিন্তু প্রসিকিউশন এসব অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।’

‘আর যে তিনজন দণ্ডিত হয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’

আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় চারজনকে হত্যা ও ৯ জনকে আটক এবং নির্যাতনের চারটি অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ তাদের বিচার শুরু হয়। বিচারকার্য শেষ হয় গত বছরের ২৬ জানুয়ারি। আসামিদের মধ্যে চারজন পলাতক ছিলেন। আজ পাঁচজনকে হাজির করা হয় ট্রাইব্যুনালে।

jagonews24

তবে রায়ের দিন সকালে পলাতক এক আসামি আলিমুদ্দিন খান ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রায় ঘোষণার পর সে আসল আসামি কিনা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর মামলার তদন্ত শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হলে ২০ ফেব্রুয়ারি প্রসিকিউশনে জমা হয়। তদন্তে ৬০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলেও ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল। এছাড়া জব্দ তালিকার সাক্ষী ছিলেন আরও দুজন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) মোট ১৮ জন সাক্ষী দেন আদালতে।

অভিযোগ গঠনের পর ২০১৮ সালের ১০ মে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শুরু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) মোট ১৮ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্কের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্যে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখেন।

এফএইচ/বিএ/এসএস/এমকেএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।