হাইকোর্টের নজরে আনার পর বগুড়ার হাসপাতালে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা
মধ্যরাতে হাইকোর্টের নজরে আনার পর অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সঙ্কটের সামাধান হয়েছে।
বিষয়টি আদালতে উপস্থাপনের পর গতকাল রাতে এ বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানি হয়। পরে আজ সকালে ওই হাসপাতালে ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সরবরাহ করা হয়।
শনিবার (৩ জুলাই) বিকেলে জাগো নিউজকে এমন তথ্য জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তিনি বলেন, ‘বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সঙ্কটে সাত করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আরও ১০ জন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক, এমন সংবাদ গণমাধ্যমে দেখে শুক্রবার মধ্যরাতেই রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমকে অবহিত করি। এরপর বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে দেখতে বলেন আদালত।’
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এরপরে রাতেই অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন স্বাস্থ্য সচিব ও ডিজির সঙ্গে কথা বলেন। আজ সকালে রেজিস্ট্রার জেনারেল জানিয়েছেন, বগুড়ার সেই হাসপাতালের হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সঙ্কটের সমাধান হয়েছে।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে জানানো হয়েছে সরকারিভাবে আগামী রোববার (৪ জুলাই) ১০/১৫টি ক্যানুলা লাগানো হবে। তবে, আজকে বেসরকারিভাবে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে কয়েকটি লাগানো হয়েছে বলে শুনেছি।’
গতকাল (২ জুলাই) প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বগুড়ায় শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ১৬ ঘণ্টায় চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন না পাওয়ায় সাত করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। আর আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন আরও ১০ জন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২২৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। যাদের অধিকাংশেরই উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হাসপাতালটিতে এখন দুটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা থাকায় দু’জনের অতিরিক্ত আর কোনো রোগীকে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন (রক্তে ঘণীভূত অক্সিজেনের মাত্রা) ৮৭ এর নিচে তাদের জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা সঙ্কটের একই চিত্র জেলার অন্য হাসপাতালেও।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার তিন হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্ট থাকা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে মোট ২৩টি। এর মধ্যে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে দুটি, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১টি এবং বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, তাদের হাসপাতালে রোগীর যে পরিমাণ চাপ সেখানে অন্তত ২০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা প্রয়োজন, কিন্তু আছে মাত্র দুটি। এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অধিক শ্বাসকষ্টে থাকা রোগীদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বগুড়ার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, গত বছর মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে করোনা বিশেষায়িত ঘোষণা করার সময় আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা কোনোটাই ছিল না। পরে আট শয্যার আইসিইউ চালু করা হয়। কিন্তু হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার বরাদ্দ মিলেছে মাত্র দুটি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ছাড়া আইসিইউ শয্যা করোনা রোগীদের জন্য তেমন কাজে আসে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আরও কমপক্ষে ২৫টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দরকার। বরাদ্দ চেয়ে দফায় দফায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে, এখনো বরাদ্দ মেলেনি।
এফএইচ/এমআরআর/এএসএম