সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে হাইকোর্টের রুল
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আয়োজনে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত আবেদন তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিভূতি তরফদার আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
এই আইনজীবী জানান, জামালপুরের তুলসিপুর কলেজ থেকে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সুফিয়া খাতুন হাসি। তিনি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরে একটি আবেদন দেন।
ওই আবেদনে বলা হয়, যেহেতু সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, তাই আমাদের জন্য মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা ২০২১-২০২২ এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় রেখে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আমার মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষাগ্রহণ শেষে দেশ ও জনগণের সেবা প্রদানের সুযোগ দিয়ে বাধিত করবেন।
এরপর তার অভিভাবক শাখাওয়াত হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বিভূতি তরফদার।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আয়োজন করতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল।
স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, শিক্ষাসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি ও রেজিস্ট্রারকে এ নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু নোটিশের পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় রিট করা হয়।
সুফিয়া খাতুন হাসি নামে এক ভর্তিচ্ছুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিভূতি তরফদার এই নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
তথ্যমতে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার নীতিমালা প্রকাশ করে বিএমডিসি। নীতিমালার ৩.৩ ধারায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিধা সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসের আলোকেই ভর্তি পরীক্ষা হবে।
এদিকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি আবেদন শুরু হয়। যা আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত চলবে। আর ১ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে হবে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা।
আগের বছরের ন্যায় এইচএসসি পাস প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৫ নম্বর এবং পূর্ববর্তী বছরের সরকারি মেডিক্যাল, ডেন্টাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৭ দশমিক ৫ নম্বর কেটে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।
যারা ২০২০ বা ২০২১ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় (পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ) উত্তীর্ণ হয়েছেন, তারা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। ২০১৮ সালের আগে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না।
এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ মোট ২০০ নম্বর হিসাবে নির্ধারণ করে মূল্যায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে এসএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ-র জন্য ৭৫ নম্বর এবং এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএর জন্য ১২৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। মোট ৩০০ নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে।
ভর্তি পরীক্ষা ১০০ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষায় ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটির প্রশ্নের মান ১। এমসিকিউ পরীক্ষা হবে ১ ঘণ্টায়। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যায় ২০, রসায়নে ২৫, জীববিজ্ঞানে ৩০, ইংরেজিতে ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১০ নম্বরের (মোট ১০০) প্রশ্ন থাকবে।
এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা যাবে। লিখিত পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেতে হবে। এর কম পেলে অকৃতকার্য বলে বিবেচিত হবে। কেবল কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের মেধাতালিকাসহ ফল প্রকাশ করা হবে।
এফএইচ/জেডএইচ/জেআইএম/ইএ