কড়া নিরাপত্তায় সুপ্রিম কোর্ট বারে দ্বিতীয় দিনের ভোট চলছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৪৮ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২৩

ব্যালট ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া প্রথম দিনের হট্টগোল, ধাওয়া পাল্ট ধাওয়ার ঘটনার পর দ্বিতীয় দিনে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোটগ্রহণ চলছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল ১০টায় শুরু হয়েছে এ দিনের ভোটগ্রহণ, যা চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে এ ভোট গ্রহণ চলছে। তবে এর আগে সকালে বিএনপিপন্থিরা ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির কাছে আদালত চলাকালীন গতকালের বুধবারের (১৫ মার্চ) ঘটনা তুলে ধরেছেন।

এরপর প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের বিরতির সময় তাদের সঙ্গে খাস কামরায় দেখা করেন। এসময় সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির কাছে গতকালের (১৫ মার্চ) ঘটনা তুলে ধরেছেন।

এর আগে প্রথম দিনের ভোট চলাকালে সাদা (সরকার সমর্থক) ও নীল (বিএনপি সমর্থক) দলের দিনভর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫-৩০ জন আহত হয়েছেন।

বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল, হাতাহাতিতে ভোট শুরু হয় দুপুর ১২টার পর। প্রথম দিনে দুই হাজার ২১৭টি ভোট পড়ে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দেননি।

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট বারের ২০২৩-২৪ মেয়াদের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের ভোট হবে দুই দিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার)। দুই দিনই সকাল ১০টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের কথা। ভোটগ্রহণের জন্য আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

তবে বুধবার সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণের সময় বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নতুন করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবি তোলেন তারা। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রেই বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এরপর আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরাও ভোটকেন্দ্রে ঢুকলে শুরু হয় হট্টগোল, এক পর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি। এসময় শতাধিক পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ঢুকে লাঠিপেটা শুরু করে। ভোটকেন্দ্রের বাইরেও আওয়ামী লীগপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়।

এসময় পুলিশের লাঠিপেটার সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকা সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হয় পুলিশ। সাংবাদিকদের এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। এতে ১২ জনের বেশি সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সভাপতি আশুতোষ সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঞার নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে জানান। তখন প্রধান বিচারপতি লিখিত অভিযোগ নিয়ে যেতে বললে পরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগের পর প্রধান বিচারপতি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এলআরএফ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ভোটগ্রহণের মধ্যে বুধবার বিকেল সোয়া ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে জড়ো হয়ে সাংবাদিকদের সামনে নির্বাচন পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

সেখান থেকে মিছিল করে এসে নির্বাচনী প্যান্ডেল, আইনজীবীদের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করেন তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বিকেল প্রায় সোয়া ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে শুরু হয়ে ৫টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ।

পরে বিএনপিপন্থিদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। বিএনপিপন্থিদের দাবি সাধারণ আইনজীবীদের ডেকে সবার মতামত নিয়ে নতুন করে ভোটগ্রহণ করতে হবে। তা না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।