সাজা নির্ধারণের জন্য আলাদা শুনানির রায় স্থগিত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩২ এএম, ২৩ মে ২০২৩
ফাইল ছবি

ফৌজদারি মামলায় উভয়পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তি-তর্কের পর রায় ঘোষণার আগে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে উপযুক্ত বা আনুপাতিক সাজা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতকে আলাদা শুনানি করতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২২ মে) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।

যশোরের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। ৮৪ পৃষ্ঠার রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ।

রায়ে বলা হয়, ‘মামলায় যখন উভয় (বাদী-বিবাদী) পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তি-তর্ক শেষ হবে, তখন অভিযুক্তকে দণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে উন্মুক্ত আদালতে বিচারককে সে অভিমত বিচারক জানাতে হবে। এরপর বিচারক অভিযুক্তের শাস্তি বা সাজার বিষয়ে শুনানির জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে একটি তারিখ নির্ধারণ করে দেবেন, যাতে উপযুক্ত বা আনুপাতিক সাজা আরোপ করা যায়।’

‘আতাউর মৃধা বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় আপিল বিভাগের রায় উদ্ধৃত করে হাইকোর্টের এ রায়ে বলা হয়েছে, ‘সাজা নির্ধারণের শুনানিতে পক্ষগুলোকে অভিযুক্তের অপরাধের সামাজিক প্রেক্ষাপট, অভিযুক্তের বয়স, চরিত্র, অর্থনৈতিক অবস্থা, ব্যক্তি বা সমাজের অভিঘাত, অপরাধের ধরণ অর্থাৎ অভিযুক্ত অভ্যাসগত, পেশাদার অপরাধী কি না, নাকি আকস্মিক অপরাধী ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরতে হবে।’

আরও পড়ুন>> সাজা নির্ধারণের জন্য আলাদা শুনানি করতে হবে: হাইকোর্ট

সাজা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিচারকের মূল্যায়ন কি হবে, তা তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, ‘সে শুনানির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি সাজা আরোপের ক্ষেত্রে বিচারককেও অপরাধীর এসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।

সেইসঙ্গে অভিযুক্তের ওপর শাস্তি আরোপের প্রভাব, বিলম্ব বিচারে অভিযুক্তের মানসিক নিপীড়ন এমনকি অপরাধীর সংশোধনের বিষয়টিও ভাবতে হবে। এরপরেই কেবল বিচারক অভিযুক্তের সাজার রায় ঘোষণা করতে পারবেন।’

এ রায়ের বিষয়টি জানিয়ে সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের প্রতি সার্কুলার জারি করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। সেটি শুনানি করে এ আদেশ দেন।

প্রায় এক দশক আগে যশোরে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে আনোয়ার হোসেন ও লাভলু নামে দুইজনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৪ মার্চে মামলা হয়। দুই আসামির মধ্যে আনোয়ার মারা গেলে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল লাভলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

আরও পড়ুন>> বিচার পেতে প্রধান বিচারপতির আত্মীয়কেই দিতে হয়েছে ১৮ লাখ

বিচারের পর ২০১৭ সালের ৩০ মে এ মামলার রায় দেন যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে লাভলুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে নিয়ম অনুযায়ী লাভলুর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য রায়সহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে, যা ডেথরেফারেন্স নামে পরিচিত। লাভলুও রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন।

এ ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির পর গত ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত ডেথ রেফারেন্স খারিজ ও লাভলুর আপিল আংশিক গ্রহণ করে রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে লাভলুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। ওই মামলার রায়ে এমন নির্দেশনা আসে।

এফএইচ/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।