ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে, আসামিকে পুলিশে দিলেন হাইকোর্ট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৬ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
ফাইল ছবি

ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মো. আমির হোসেন নামের এক যুবককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরপর সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তাকে আদালত থেকে নিয়ে যায়।

এর আগে আসামির বিষয়ে করা জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ (সামারি রিজেক্ট) করে দেন আদালত। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশিরউল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে এদিন জামিনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি। আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট কাজী মো. এমদাদুল হক।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি বলেন, ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আসামি দিনের পর দিন ধর্ষণ করে আসছিলেন। এরপর সেই ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত মো. আমির হোসেন ওরফে মো. আমির শাহ (৩৫)। এ ঘটনায় করা মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চান আসামি। আদালত আসামি আমিরকে আগাম জামিন না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

আদালত বলেন, ‘এই অভিযুক্তের হাত থেকে বাঁচতে মেয়েটি বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তারপরও এই আসামি তাকে ছাড় দেননি। গোপনে করা ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধী আদালত থেকে কোনো ধরনের আইনি প্রতিকার পেতে পারেন না।’ এরপর আসামিকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।

শুনানি শেষে আদালত জামিন না দেওয়ার কথা জানান। তখন আসামির আইনজীবী আবেদনটি খারিজ করে দেওয়ার আবেদন জানান। হাইকোর্ট বলেন, এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা সেই সুযোগও দেবো না আসামিকে। এরপরই সরাসরি জামিন আবেদন খারিজ করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এমবিবিএস পড়াকালীন ২০১৬ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে আমিরের সঙ্গে পরিচয় হয় ওই নারী শিক্ষার্থীর। পরিচয় ঘনিষ্ঠ হলে আসামি ভালোবাসার অভিনয় করে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাকে ধর্ষণ করেন। সেই ধর্ষণের সংগৃহীত ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নানা সময়ে মোট তিন লাখ ২৯ হাজার টাকা আদায় করেন। পরবর্তী সময়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ২০২২ সালে আবার ধর্ষণ করেন। পরে ওই চিকিৎসক বিদেশে চলে যান। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন।

এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এমবিবিএস পাস করে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ভুক্তভোগী নারী। এ ঘটনায় গত ২১ নভেম্বর চকবাজার থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারা এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮(১)(২)(৩) ধারায় এ মামলা করা হয়।

মামলায় আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করেন আসামি। এ সময় আসামির সঙ্গে তার স্ত্রীও আদালতে হাজির হন। শুনানির এক পর্যায়ে আসামির স্ত্রী স্বামীর পক্ষে আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দেন।

তিনি বলেন, সবারই কিছু না কিছু অতীত থাকে। তখন হাইকোর্ট বলেন, এ ধরনের ঘটনা যদি আপনার ক্ষেত্রে ঘটত তখন কি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারতেন? এরপরই আদালত জামিন না দিয়ে আসামিকে পুলিশের সোপর্দ করেন।

এমএইচ/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।