ব্যায়াম করার সময় হঠাৎ শরীর খারাপ লাগলে কী করবেন
সুস্থ থাকতে ব্যায়াম বা শরীরচর্চার বিকল্প নেই – এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আপনি কি জানেন, ভুল পদ্ধতিতে বা শরীরের সীমা না বুঝে অতিরিক্ত ব্যায়াম ভয়াবহ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে?
সম্প্রতি বাংলাদেশে রক ব্যান্ড ‘ওইনড’-এর ভোকালিস্ট এ কে রাতুল শরীরচর্চা করার সময় আকস্মিক স্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনা আমাদের অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এখন ভাবা উচিত – ব্যায়াম কি সবসময় নিরাপদ? শরীরচর্চার সময় হঠাৎ শরীর খারাপ লাগলে আসলে কী করা উচিত? শরীরের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে ক্ষতি কী কী হতে পারে?

চলুন জেনে নেওয়া যাক, এ বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলে-
অতিরিক্ত ব্যায়াম কি আদৌ উপকার করে?
অনেকেই মনে করেন, ‘যত বেশি ঘাম, তত বেশি লাভ!’ কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, শরীরের সক্ষমতা বা স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা না করে অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে লাভ তো দূরের কথা, বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।
>> এতে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
>> পেশী ক্ষতিগ্রস্ত বা র্যাবডোমায়োলাইসিস হতে পারে।
>> দেহে পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
>> ঘাড়, হাঁটু, কোমরে মারাত্মক আঘাত লাগতে পারে।
>> হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।

বাড়িতে বা জিমে শরীরচর্চার সময় যেসব লক্ষণ দেখে সতর্ক হবেন
>> মাথা ঘোরা বা ঝাপসা দেখা।
>> বুকে ব্যথা বা চাপ ধরে আসা।
>> স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম হওয়া।
>> শ্বাসকষ্ট ও দুর্বলতা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
>> মুখ বেঁকে যাওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া।
>> হাত বা পা অবশ লাগা।
এই লক্ষণগুলো হালকা মনে হলেও, এগুলো হতে পারে স্ট্রোক বা হৃদরোগের আগাম সংকেত। তাই এমন লক্ষণ দেখলে কোনোভাবেই অবহেলা করবেন না।

হঠাৎ শরীর খারাপ লাগলে কী করবেন?
১. ব্যায়াম বন্ধ করুন। যেই মুহূর্তে আপনি কোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করবেন, সঙ্গে সঙ্গে থেমে যান। জেদ করে চালিয়ে যাওয়া বিপজ্জনক।
২. বসে পড়ুন বা শুয়ে যান। বাড়িতে বা জিমে, যেখানেই থাকুন, সেখানে নিরাপদভাবে বসে বা শুয়ে পড়ুন, যেন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত না লাগে।
৩. পানিশূন্যতা বোধ করলে পানি পান করুন। তবে খুব বেশি পানি একবারে খাওয়া ঠিক নয়।
৪. পরিবার বা জিম কর্তৃপক্ষকে জানান। জিমে থাকলে প্রশিক্ষক বা আশেপাশের কাউকে জানান। তারা জরুরি সাহায্য নিতে পারবেন।
৫. প্রয়োজনে হাসপাতালে যান। লক্ষণগুলো যদি কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়, দেরি না করে হাসপাতালে যান ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, কিন্তু শর্তসাপেক্ষে। জেনে রাখুন ব্যায়াম করার আগে কোন বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন-
>> আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করুন।
>> নিজের সক্ষমতা বুঝে ব্যায়ামের ধরন বেছে নিন।
>> ভারী ব্যায়ামের আগে অবশ্যই শরীর গরম করার জন্য ওয়ার্ম-আপ করুন।
>> প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন।

এই সাবধানতাগুলো সঙ্গে কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া দরকার-
>> একদিনে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে ‘ফিট’ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
>> শরীরে পানিশূন্যতা নিয়ে ব্যায়াম করবেন না।
>> ব্যথা বা অসুস্থ অবস্থাতেও শরীরচর্চা চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আগে শরীর খারাপের কারণ জেনে নিন।
>> না জেনে ও না শিখে জিমে কোনো মেশিন ব্যবহার করবেন না।
>> ট্রেইনারের উপস্থিতি ও পরামর্শ ছাড়া ভারী ওজন তোলার চেষ্টা করবেন না।

ফিটনেসের মানে শুধু পেশি বানানো বা ওজন কমানো নয়। বরং আপনার শরীর, মনের প্রয়োজন ও সীমাবদ্ধতা বুঝে ধাপে ধাপে সুস্থতার দিকে এগিয়ে যাওয়াই স্বাস্থ্যকর। ব্যায়াম অবশ্যই করুন, কিন্তু নিজের শরীরকে ভালোবেসে, বুঝে-শুনে। কারণ, আপনি নিজে না থাকলে আপনার ফিটনেস কার জন্য?
আপনি যদি শরীরচর্চা শুরু করতে চান, অথবা ইতিমধ্যেই করে থাকেন, তাহলে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হন। প্রয়োজনে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বা ফিটনেস এক্সপার্টের পরামর্শ নিন।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক, হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ন্যাশনাল স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন
এএমপি/এমএস