কেন বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগাবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০২৫

আজকাল শহরে বের হলেই প্রায় নিশ্চিতভাবে আমরা কোনো না কোনো সিসি ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ি। অপরাধ দমন ও নিরাপত্তা জোরদার করতে এ ধরনের নজরদারির অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।

চুরি, ভাঙচুর কিংবা হামলার মতো ঘটনার প্রমাণ হিসেবে অনেক সময় সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে অপরাধী ধরতে সাহায্য করে।

তবে এই বিষয়টা অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর লাগে। যারা কখনো অপরাধ করার কথা ভাবেনও না, তারা মনে করেন – আমার প্রতিটি পদক্ষেপ নজরে রাখা হচ্ছে, এটা আমার প্রাইভেসি নষ্ট করছে। বিশ্বজুড়ে কেউ কেউ আবার এটিকে জর্জ অরওয়েলের উপন্যাসের ‘বিগ ব্রাদার’-এর মতো গোপনীয়তার ওপর আক্রমণ হিসেবেও দেখেন।

তাই কঠিন এই ইস্যুটিকে একটু হালকা করে দেখার জন্যই আজকের দিনটিকে (১৬ আগস্ট) ‘সারভেইলেন্স ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। অর্থাৎ, নিরাপত্তা যেমন জরুরি, তেমন ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ – এ বিষয়টি নিয়ে ভাবার এবং আলোচনা করার দিনই হলো নজরদারি দিবস বা সারভেইলেন্স ডে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে শুরু করে গ্রামের শান্ত পরিবেশেও এখন চুরি, ছিনতাই, খুনের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বা ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) এর ব্যবহার অনেক বেড়েছে। আজ নজরদারি দিবসে জেনে নিন কী কী কারণে বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগাবেন-

>> মানসিক শান্তি

ভাবুন, আপনি অফিসে, বাজারে বা ভ্রমণে – তবুও আপনার বাড়ির প্রধান দরজা, গ্যারেজ কিংবা বারান্দায় কী হচ্ছে তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন। আধুনিক সিসি ক্যামেরা সিস্টেম এমন সুবিধাই দিচ্ছে। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাড়ির অবস্থা নজরে রাখা সম্ভব। এতে শুধু নিরাপত্তা নয়, মানসিক শান্তিও পাওয়া যায়।

কেন বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগাবেন

>> ডিটারেন্স ইফেক্ট

সিসি ক্যামেরা লাগানো বাড়ি সাধারণত অপরাধীদের টার্গেট তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। কারণ তারা জানে, কোনো কর্মকাণ্ড ঘটালেই প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ফুটেজ থেকে যাবে, যা পুলিশের হাতে পড়লে দ্রুত ধরা পডড়ে গেতে পারেন তারা। অনেক সময় ক্যামেরা কেবল দেখেই অপরাধী পিছিয়ে যায়, এটাকে বলা হয় ‘ডিটারেন্স ইফেক্ট’। এর অর্থ ভয় দেখিয়ে কোনো কাজ আটকানো বা নিরুৎসাহিত করা।

>> প্রমাণ সংরক্ষণ

বাড়িতে বা আশেপাশে কোনো চুরি, হামলা বা দুর্ঘটনা ঘটলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। পুলিশ তদন্তের ক্ষেত্রে এগুলো অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার এক এলাকায় একাধিক চুরির ঘটনার পর সিসি ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করে পুলিশ দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছিল। এমন ঘটনা প্রমাণ করে, প্রযুক্তি থাকলে ন্যায়বিচার পেতে সময় অনেক কম লাগে।

>> শিশু ও বয়স্কদের নিরাপত্তা

যেসব পরিবারে ছোট বাচ্চা বা প্রবীণ সদস্য থাকে, তারা অনেক সময় একা বাড়িতে থাকেন। সিসি ক্যামেরা থাকলে বাইরে থেকেও তাদের অবস্থা নজরে রাখা যায়। কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। একইভাবে, বাসায় গৃহকর্মী বা কেয়ারটেকার থাকলে তাদের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও সিসি ক্যামেরা সহায়ক।

>> আশেপাশের নিরাপত্তা

শুধু বাড়ির ভেতর নয়, বাইরের অংশ যেমন গ্যারেজ, বারান্দা বা প্রধান ফটকেও সিসি ক্যামেরা লাগানো জরুরি। এতে গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং অনধিকারপ্রবেশকারীদের কার্যকলাপ ধরা পড়ে। এমনকি অনেক সময় রাস্তার পাশের ঘটনাও ক্যামেরায় রেকর্ড হয়, যা প্রতিবেশী বা স্থানীয়দের কাজে লাগতে পারে।

>> দুর্ঘটনা

গ্যাস লিক, আগুন লাগা বা অন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে সিসি ক্যামেরা দিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যদি বাসায় কেউ আহত হয় বা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে দূর থেকে তা দেখে পরিবার বা জরুরি পরিষেবাকে খবর দেওয়া সম্ভব হয়।

কেন বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগাবেন

খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়

এতসব ব্যবহারিক উপকারিতা থাকলেও সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করার সময় অবশ্যই আইন মেনে চলতে হবে। প্রতিবেশী বা অন্য কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বাংলাদেশে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সিসি ক্যামেরা বসানো বৈধ হলেও তা অপব্যবহার করলে আইনগত জটিলতায় পড়তে হতে পারে।

অনেকে ভাবেন, সিসি ক্যামেরা বসাতে খরচ অনেক বেশি। কিন্তু এখন বাজারে বিভিন্ন দামের ও বৈশিষ্ট্যের ক্যামেরা পাওয়া যায়, যা ২-৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে উচ্চ বাজেটের রয়েছে। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে এই সিসি ক্যামেরার সিস্টেম বহু বছর কার্যকরভাবে কাজ করে।

বাড়ি শুধু চার দেওয়াল নয়; এটি আমাদের স্বপ্ন, পরিশ্রম, স্মৃতি ও প্রিয়জনের নিরাপদ আশ্রয়। আর সেই আশ্রয়কে নিরাপদ রাখতে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া মন্দ কিছু নয়। সিসি ক্যামেরা কেবল অপরাধ প্রতিরোধ নয়, পরিবারের প্রতি যত্ন ও দায়িত্ববোধেরও বহিঃপ্রকাশ। তাই, আজই নিরাপত্তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা ভাবুন। কারণ নিরাপত্তা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি প্রয়োজন।

সূত্র: সিসিটিভি সিকিউরিটি প্রোস ডট কম, অ্যাঞ্জি ডট কম, মোন্টাভিউ ডট কম, ব্যাকস্ট্রিট-সারভেইলেন্স ডট কম, ডেইজ অব দ্য ইয়ার

মামুনূর রহমান হৃদয়/এএমপি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।