আন্তর্জাতিক কফি দিবস
ঘরের কোণে তৈরি করুন নিজের রোমান্টিক কফিশপ
'কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই' গানের এই লাইন আমাদের মনে করিয়ে দেয় এক অন্যরকম সময়কে। একসময় কফি মানেই ছিল বন্ধুদের আড্ডা, গল্প আর তর্ক-বিতর্কে ভরা সকাল-বিকেল। পুরোনো কফি হাউসের কাঠের চেয়ার, সস্তা কিন্তু গরম কফির কাপ আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনায় কাটানো সময় সবকিছু মিলেই কফি হয়ে উঠত প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ।
সময় বদলেছে, আড্ডার ধরনও পাল্টেছে। এখন আড্ডা কেবল বন্ধুদের সীমায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং কফিকে ঘিরেই তৈরি হয় রোমান্টিক মুহূর্ত, পারিবারিক মিলনমেলা কিংবা একান্ত সময় কাটানোর পরিবেশ। শহরের ঝলমলে কফিশপগুলো আজ প্রেমিক-প্রেমিকার ডেট স্পট, আবার অনেকের কাছে দিনের চাপ কাটানোরও উপায়। তবে বাইরে গিয়ে কফি খাওয়া মানেই বাড়তি খরচ, ভিড় আর কোলাহল। অথচ চাইলে ঘরেই তৈরি করা যায় বাইরের মতোই রোমান্টিক কফি কর্নার।
রোমান্টিক পরিবেশের শুরুটা অবশ্যই কফির কাপ থেকে। ঘরে থাকা ইনস্ট্যান্ট কফি, দুধ আর চিনি দিয়েই বানানো যায় একেবারে ক্যাফে-স্টাইল পানীয়। একটু চেষ্টা করলে লাতে বা ক্যাপাচিনোর মতো ফেনায় ভরা কফিও সম্ভব। ফ্রেঞ্চ প্রেস বা কফি মেশিন থাকলে সুবিধা বেশি, না থাকলেও হ্যান্ড বিটার দিয়ে দুধ ফেনা তুলে কাপে ঢালুন দেখবেন বাইরের কফির থেকে কম কিছু নয়।
আরও একটু যত্নশীল হলে কফিতে যোগ করতে পারেন চকলেট সিরাপ, ক্যারামেল বা দারুচিনির গুঁড়া। আর কাপে হালকা আঁকিবুকি করলে হোক না তা একেবারে অপটু! প্রিয়জনের চোখে সেটাই হয়ে উঠবে সবচেয়ে নিখুঁত লাতে আর্ট।
ঘরে কফি কর্নার বানাতে আলাদা জায়গার দরকার নেই। জানালার পাশে ছোট্ট একটি টেবিল, বারান্দার কোণ, কিংবা ছাদের নিরিবিলি অংশই যথেষ্ট। টেবিলে দুটো মোমবাতি জ্বালান, চারপাশে ফেয়ারি লাইট ঝুলিয়ে দিন। চাইলে কয়েকটি টব গাছ কিংবা ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন।
হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ করলে পরিবেশ আরও রোমান্টিক হয়ে উঠবে। আপনারা চাইলে একসঙ্গে প্রিয় কোনো গান গুনগুন করতে পারেন। বাইরে ভিড়ের মাঝে যেখানে ব্যক্তিগত মুহূর্ত তৈরি করা কঠিন, সেখানে ঘরে বানানো এই পরিবেশ হয়ে উঠবে আরো রোমান্টিক।
একটা বড় সুবিধা হলো খরচ। শহরের জনপ্রিয় কফিশপে দুজনের খরচ সহজেই ৪০০–৫০০ টাকায় পৌঁছে যায়। অথচ ঘরে বানানো কফিতে খরচ হবে মাত্র ৫০–৬০ টাকা। শুধু খরচ বাঁচানোই নয়, এখানে আছে নিজের মতো করে বানানোর স্বাধীনতা। চাইলে দুধের পরিমাণ কমাতে পারেন, চিনি এড়িয়ে চলতে পারেন বা নতুন ফ্লেভার ব্যবহার করতে পারেন।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো একসঙ্গে কফি বানানোর আনন্দ। দুইজন মিলে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে কফি তৈরি করা, কাপ সাজানো বা টেবিল গোছানো এগুলো নিজেদের ভেতর সম্পর্ক মজবুত করে।
এক কাপ কফি অনেক সময় হয়ে ওঠে ভালোবাসার ভাষা। প্রিয়জনকে হাতে দেওয়া কাপে ছোট্ট একটি বার্তা লিখে দিতে পারেন। যেমন: 'তুমি ছাড়া এই কফি ফিকে'। কফির সঙ্গে রাখতে পারেন আপনার পছন্দের চকলেট।
এমনকি এই কফি কর্নারে বসে শুধু আড্ডা নয়, একসঙ্গে বই পড়া, ছবি তোলা বা স্মৃতির গল্প করাও হতে পারে দারুণ রোমান্টিক। এখানেই লুকিয়ে আছে ঘরে বানানো কফি কর্নারের বিশেষত্ব,অর্থাৎ কোলাহলহীন ব্যক্তিগত পরিবেশ।
প্রতি বছর ১ অক্টোবর পালিত হয় আন্তর্জাতিক কফি দিবস। বিশ্বজুড়ে কফির যাত্রা, কফি চাষি ও উৎপাদকদের অবদানকে স্মরণ করতেই এ দিবসের আয়োজন। তবে আমাদের মতো কফিপ্রেমীদের কাছে এ দিনটা হতে পারে সম্পর্ককে নতুনভাবে উদযাপন করার দিন। বাইরে ভিড়ের মাঝে না গিয়ে, ঘরেই যদি বানিয়ে নেওয়া যায় রোমান্টিক কফি কর্নার, তবে সেটিই হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে সুন্দর উদযাপন।
কল্পনা করুন চারদিকে নীরবতা, আলো-আঁধারির মধ্যে টেবিলে দুটো মোমবাতি, প্রিয়জনকে সামনে রেখে কফির কাপ হাতে বসে আছেন। বাইরে হয়তো মানুষ দামি ক্যাফেতে ছবি তুলছে, কিন্তু আপনাদের ভাগাভাগি করা এই নীরবতা আর হাসি হয়ে উঠবে অমূল্য। সেই মুহূর্তগুলোকে কোনো দাম দিয়ে মাপা যায় না, এটাই ঘরে বানানো কফি কর্নারের বিস্ময়।
কফি সকলের কাছে পানীয় নয়! কারো কারো কাছে এটি আবেগ, সম্পর্ক আর ভালোবাসার প্রতীক। নস্টালজিক কফি হাউসের আড্ডা থেকে আজকের ঝলমলে কফিশপ যাত্রাটা বদলেছে বটে। কিন্তু কফির সঙ্গে যুক্ত আবেগ আজও একই। তাই রোমান্স খুঁজতে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। সামান্য কফি, কিছু সৃজনশীল সাজসজ্জা আর প্রিয়জনের উপস্থিতিতেই ঘর হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে রোমান্টিক কফিশপ। আর কফি দিবসে এই আয়োজন যেন পেয়ে যায়, ভালোবাসাকে নতুনভাবে উদযাপনের অজুহাত।
আরও পড়ুন
কফি পান করার আগে জেনে নিন ক্যাফেইনের প্রভাব
কফিতে দুধ মিশিয়ে পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি খারাপ?
এসএকেওয়াই/এএসএম