কৃতজ্ঞতা কেন প্রকাশ করবেন, জানাচ্ছে গবেষণা
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মানুষের চরিত্রের এক অপূর্ব গুণ, একথা আমরা সবাই জানি। এই গুণের কারণে একজন মানুষ অন্যদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেন। কিন্তু আপনার এই কৃতজ্ঞতাবোধ আপনার নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে?
আজ (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব কৃতজ্ঞতা দিবসে জেনে নিন এর প্রভাব-
১. বিষণ্নতা কমায়
২০২১ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ডিপ্রেশন অ্যান্ড অ্যানজাইটি-তে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাদের মধ্যে বিষণ্নতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। গড়ে কৃতজ্ঞতার মাত্রা যত বাড়ে, বিষণ্নতার প্রবণতা তত কমে যায়।

২০২৩ সালে জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডারস-এ প্রকাশিত একটি সিস্টেমেটিক রিভিউ জানাচ্ছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করায় গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমিয়েছে। শুধু তাই নয়, সামগ্রিক মানসিক সুস্থতারও উন্নতি হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, মানসিক চিকিৎসায় থেরাপির পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অভ্যাসও একটি কার্যকর সহায়ক পদ্ধতি হতে পারে।
২. জীবনের প্রতি সন্তুষ্টি বাড়ায়
জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ একজন মানুষের সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে পারে। ২০১৯ সালে জার্নাল অব পজিটিভ সাইকোলজি-তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন একটি তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকায় তারা লিখেছেন তাদের কৃতজ্ঞতার কথা। দুই সপ্তাহ পর দেখা গেছে তারা আগের তুলনায় বেশি সুখী ও ইতিবাচক হয়েছেন এবং জীবনের প্রতি তাদের সন্তুষ্টিও বেড়েছে।
২০২৪ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ইনভেস্টিগেশন ইন হেলথ, সাইকোলজি অ্যান্ড এডুকেশন-এ প্রকাশিত আরেকটি গবেষণাও এই একই তথ্য সমর্থন করেছে। গবেষণাটি জানাচ্ছে, অংশগ্রহণকারীদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি, ইতিবাচক আবেগ এবং ট্রমার পর ইতিবাচক উন্নতির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
৩. অসুস্থতায় স্বস্তি আনে
কোনো ব্যক্তি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, বিশেষ করে কঠিন কোনো রোগে আক্রান্ত হন, তখন অনেকেই কাছের মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে চান। কেউ কেউ অন্যের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু কেন কঠিন সময়টিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়? অনেকে বলেন এই সময় মন নরম হয়ে যায়। তবে বিজ্ঞান বলছে এটি উদ্বেগ কমাতে সক্ষম।
২০২৫ সালে জার্নাল অব সাইকোসোশিয়াল অনকোলজি-তে প্রকাশিত একটি র্যান্ডমাইজড ট্রায়ালে দেখা গেছে, ছয় সপ্তাহ ক্যানসার আক্রান্ত নারীদের কৃতজ্ঞতার অনুশীলন তাদের উদ্বেগ কমিয়েছে। যদিও অসুস্থতায় বিষণ্নতার বড় পরিবর্তন আসেনি। তবে গবেষকরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলনে প্রভাব আরও গভীর হতে পারে।

৪. সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে
তবে দুই সপ্তাহ, চার সপ্তাহ কৃতজ্ঞতার অনুশীলন করে ছেড়ে দিলে আপনি এর সুফল পাবেন না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। কৃতজ্ঞতার সুফল পেতে হলে এই অনুশীলনকে আপনার জীবনের অংশ, আপনার ব্যক্তিগত অভ্যাসের পরিণত করতে হবে।
২০২২ সালে জার্নাল অব কনটেক্সচুয়াল বিহেভিয়োরাল সায়েন্স-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, অংশগ্রহণকারীদের চার সপ্তাহে কৃতজ্ঞতার অনুভূতি সরাসরি তাদের মানসিক সুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ, নিয়মিত ও ধারাবাহিক অনুশীলনই আসল চাবিকাঠি।
২০২৩ সালে জার্নাল অব হেলথ সাইকোলজি-তে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনা বলছে, কৃতজ্ঞতার অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। হৃদ্রোগীদের ওপর করা কয়েকটি গবেষণায় কৃতজ্ঞতার চর্চা রক্তচাপ ও হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বলছে — কৃতজ্ঞতা উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমায়, ইতিবাচক আবেগ জাগায় এবং শরীরকেও ভালো রাখে। তাই আপনার প্রতিদিনের জীবনে কৃতজ্ঞতা অনুভব করা ও প্রকাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সূত্র: জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডারস, জার্নাল অব বিহেভিয়োরাল অ্যাডিকশন্স, জার্নাল অব পজিটিভ সাইকোলজি, জার্নাল অব কনটেক্সচুয়াল বিহেভিয়োরাল সায়েন্স, জার্নাল অব হেলথ সাইকোলজি, জার্নাল অব সাইকোসোশিয়াল অনকোলজি, ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ইনভেস্টিগেশন ইন হেলথ, সাইকোলজি অ্যান্ড এডুকেশন, জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি
এএমপি