বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্মদিন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ০২:৪০ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

অসংখ্য জনপ্রিয় বাউল গান ও গণসংগীতের রচয়িতা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্মদিন আজ। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি দিরাই উপজেলার ধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান।

দারিদ্র্য ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আব্দুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। শৈশব থেকেই একতারা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। জীবন কেটেছে সাদাসিধে ভাবে। বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নেন কমর উদ্দিন, সাধক রসিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহিম মোস্তান বকসের কাছ থেকে।

বিজ্ঞাপন

কিংবদন্তিতুল্য এ বাউল সশরীরে আমাদের মাঝে না থাকলেও তার গান ও সুরধারা কোটি কোটি তরুণসহ সব স্তরের মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ভাটির এই গুণী মানুষ। মৃত্যুর পর সব স্তরের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

শাহ আব্দুল করিম বাংলার লোকজ সংগীতের ধারাকে আত্মস্থ করেছেন অনায়াসে। ভাটি অঞ্চলের সুখ-দুঃখ তুলে এনেছেন গানে। নারী-পুরুষের মনের কথা ছোট ছোট বাক্যে প্রকাশ করেছেন আকর্ষণীয় সুরে। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ-প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তিনি গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের দর্শন থেকে। জীবিকা নির্বাহ করেছেন কৃষিকাজ করে। কিন্তু কোনো কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

অসংখ্য গণজাগরণের গানের রচয়িতা বাউল শাহ আব্দুল করিম অত্যন্ত সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন। গানে-গানে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি লড়াই করেছেন ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে। এজন্য মৌলবাদীদের দ্বারা নানা লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন তিনি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, কাগমারী সম্মেলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মানুষকে প্রেরণা জোগায় শাহ আবদুল করিমের গান।

গানের জন্য মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্যও পেয়েছেন তিনি। শাহ আব্দুল করিম লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন ১৬শ’র বেশি গান। যেগুলো সাতটি বইয়ে গ্রন্থিত আছে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনুবাদ হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান গাইলেও এসব গান শুধু ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এতে তিনি বাংলাদেশ নয় বাংলা ভাষাভাষি পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। পেয়েছেন একুশে পদক।

নাট্যকার শাকুর মজিদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘ভাটির পুরুষ’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র। এখনো সুবচন নাট্য সংসদ করিমকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা ‘মহাজনের নাও’ নাটকের প্রদর্শনী করে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এ ছাড়াও ২০১৭ সালে শাহ আব্দুল করিমের জীবনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস লেখেন সাইমন জাকারিয়া। নাম ‘কূলহারা কলঙ্কিনী’।

বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের গানের মধ্যদিয়ে তাঁকে খুঁজতে প্রতিদিন ভক্ত ও স্বজনরা গানের আসর বসান। গানের মধ্যে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতেই সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান ভক্ত-আশেকানরা।

বিজ্ঞাপন

লিপসন আহমেদ/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।