চন্দ্রলেখা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২১ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২৩

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

দীপ্তর বিয়ে থেকে ফেরার পর ঘোরের মধ্যে কেটে গেছে পুরো সপ্তাহ। বিয়ে শেষ, কনেসহ বরযাত্রীরা বাড়ির পথ ধরেছে। প্যান্ডেলের বাঁশগুলো তখনও তোলা হয়নি। রঙিন কাপড়গুলো খোলা হচ্ছে পেরেকের গাঁথুনি থেকে। ছড়ানো-ছিটানো জরি আর কাগজের টুকরায় হু-হু করে শূন্যতা। কেউ চলে গেছে, যে ছিল কয়েক ঘণ্টা আগেও; এই ঘোরটাই আমার কাটেনি এখনো।

চন্দ্রলেখার সঙ্গে দীপ্তর বিয়েতেই প্রথম দেখা। শিশির-ধোঁয়া ফুলের মতো মেয়েটি বন্ধুর বৌয়ের বান্ধবী। ওদের সাতপাক শুরু হবে; তখন কোথা থেকে হুট করে গোত্তা খাওয়া ঘুড়ির মতো এসে আমার গা ঘেঁষে বসলো সে। সাদাসিধে মুখে চঞ্চল চোখ। যেন একটা নিটোল মানুষ আবৃত আবছা সাদা শাড়িতে। তার লাল পাড়ের নিচে আলতা পরা পা।

হঠাৎ চোখ তুলে সে তাকালো আমার দিকে। তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে যেন আমার ভেতরটা স্পষ্ট দেখে নিয়ে বলল, ‘আপনি যে আমার কথা ভাবছেন, এ আমার পরম সৌভাগ্য!’

আমি তখন সত্যিই চন্দ্রলেখার কথা ভাবছি। অচেনা মেয়েটা কেমন যেন টানছে আমাকে। পাশে বসার পর একটা সুখ অনুভব করছি; মস্তিষ্ক এসব ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানান দিচ্ছে। প্রেমিকা তো যত্রতত্র মেলে কিন্তু এমন মানুষের বড্ড অভাব।

চাপা ঠোঁটে হাসির ঝলক খেলে গেলো চন্দ্রলেখার। খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘আপনার হাতখানি একবার হাতে নিই?’ তারপর আবার চোখ তুলে তাকালো। ওর আকুতিময় চাহনিতে আমি অবশ হয়ে এলাম; বুকের ভেতরটা মোমের মতো গলে এলো। মনে হলো, একে দেওয়া যায়, সবকিছু দেওয়া যায়।

চন্দ্রলেখা আমার কাঁধে মাথা রাখলো। আমরা একসঙ্গে উলুধ্বনি, ঢাক-ঢোলের শব্দে বর-বউয়ের সাতপাক-শুভদৃষ্টি দেখলাম। তারপর হাস্যোজ্জ্বল স্নিগ্ধতায় সে উঠে চলে গেল। কথা নয়, শুধু মনে হলো-- এ সামান্যই কিন্তু এইসব ছোট ছোট সুখই তো জীবনের মাধুর্য।

ঢাকা ফিরে বন্ধুমহলে চাপা গুঞ্জন। সেসব শুনে বৌদি তার বাপের বাড়ি ডেকেছেন। নির্ঘুম রাতের পর ফজরের নামাজ শেষে রেলিংয়ে দাঁড়াতেই চোখ চলে গেল কীর্তনখোলার পাড়ে। ভোরের আলো ফুটেছে। আড়মোড়া ভাঙছে সাদা হাঁসের দল। ছড়াতে শুরু করেছে মিঠে রোদ। দুপাশের মাঠ-ঘাট, ক্ষেত, গেরস্থ বাড়ির উঠান, নারকেল-সুপারি গাছের ঠিকানায় মুগ্ধতার চিঠি বিলি করতে করতে আমি এগিয়ে চলি!

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।