রাব্বী আহমেদের চারটি কবিতা
সম্পর্ক
সম্পর্ক যেন প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রতিদিন হাজিরা, ইয়েস স্যার, উপস্থিত ম্যাড্যাম।
দু’একদিন ক্লাস মিস গেলেই দরখাস্ত,
জবাবদিহীতা…কারণ দর্শাও নোটিশ।
প্রতিদিন জানান দিতে হয়, আছি, আছি, আছি।
সম্পর্কগুলো কেমন যেন, নড়বড়ে…
একটু গ্যাপ বাড়লেই তুই থেকে তুমি,
তুমি থেকে আপনি।
অচেনা অচেনা ভাব, আন্তরিকতার অভাব।
যেন মাত্রই পরিচয়।
শেষ যে কে কবে বলেছিল, কেমন আছো?
এরপর সত্যিই কেমন আছি জানার জন্য
অপেক্ষা করে তাকিয়েছিল চোখ বরাবর।
সম্পর্কগুলো গোল্ডফিশ,
এক রৈখিক, শর্টটাইম মেমোরি লস।
‘তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি?’
সংসার
বিশাল সংসার তোমার, ছেলেমেয়ের স্কুল, নোট বুক
ক্লাস অ্যাসেসমেন্ট সাইন, ব্রেকফাস্ট, রুচিশীল আউটলুক
নোংরা কাপড়, ডিটারজেন্ট, স্কুল ভ্যান, বাজারের ফর্দ,
ফুলদানিতে রাখা ফুল, ক্লাসিক্যাল হোম টেক্সট,
বিছানার চাদর পালটানো দিন
পিয়াজ-রসুন-আদা, মৌসুমী ফল, ফ্রেশ সবজি, সয়াবিন।
আপ্যায়ন, অতিথি, সামাজিকতা, ল্যাডিস ক্লাব, ব্যাংক, চেকবুক
এরমাঝে ইতিউতি, সাম্প্রতিক বিশ্ব, নোটিফিকেশন, ফেসবুক।
সন্ধ্যায় চিত্রকলা, নাচ, মুদ্রা, গান, থিয়েটার, মঞ্চ নাটক দেখার দিন
সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া মুভি, ফটোগ্রাফি, ফ্রেম, হারমোনিয়াম
শাড়ির সেইফটিপিন।
বিশাল সংসার তোমার, ফুল পাখিদের যত্ন, আবদার।
আঁচলে চাবির থোকা, অপেক্ষারত চোখ,
সবাই খেল কি না, স্বামী, সন্তান এমনকি কাজের লোক।
আগামীকালের বাজার, বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল,
ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার, জানালার পর্দা, জন্মবিরতিকরণ পিল।
এরপর মশারি, মেডিপ্লাস, লরিয়েল লিপস্টিক, পারফিউম
আজকের সাহিত্য পাতা, প্রিয় কোনো বই,
ফিনফিনে কাপড়
ঘুমের ক্লাসরুম….
ময়লা গাড়ির বাশি, আবার সকালে ওঠা,
গাছে পানি, গোসল ফেরা চোখে কাজলের দাগ,
বিশাল সংসার তোমার,
বিশালতায় ভরা সব মায়া মায়া অনুরাগ।
স্ত্রী
স্ত্রী ভালোবাসুক,
জন্মদিনে হুলস্থুল কাণ্ড করে বসুক,
ঘর ভর্তি জ্বালাক কয়েকশো মোমবাতি।
স্ত্রী ভালোবাসুক,
কাপড়ের মতো কাচুক,
পর্যাপ্ত নিংড়িয়ে আলগোছে মেলে দিক তারে।
শুকিয়ে গেলে মমতামিশ্রিত আলনায় মেলে রাখুক।
স্ত্রী ইস্ত্রীর মতো পরিপাটি করুক,
ভাজ করে মনের ওয়াড্রোবে রাখার আগে
তার মধ্যে ন্যাপথেলিন দিয়ে রাখুক সবচেয়ে প্রিয়
শাড়ি……
আয়না
আয়না ভেঙে গেলে যেমন অনেকগুলো আয়নার জন্ম হয়,
তেমনি আমাকেও ভেঙে ফেললে দেখবে,
অনেক গুলো আমি হয়ে,
অনেকগুলো প্রতিবিম্ব হয়ে,
অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন আমি,
আলোর অধিকার নিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি।
সেসব আয়নায় নিজেকে দেখতে চেয়ে
তুমি ভুল করে দেখে ফেলবে আমাকেই।
ইচ্ছে হলে ভেঙে ফেলো আয়নার মতো।
অজস্র ‘আমি’ হয়ে জন্মাবো টুকরো আয়নার মতো।
এইচএন/এমএস