ফকির ইলিয়াস এর তিনটি কবিতা
আশ্রয়পত্র
আমি জানি মসৃণ মাটিই আমার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞাপন। সবুজ
চারাগাছকে `সুপ্রভাত` জানিয়ে পূবাকাশে উঠে যে সূর্য-
সে ও আমার পক্ষেই লিখে প্রতিদিনের দিনলিপি। যে পাখি
স্থির দাঁড়িয়ে তার প্রেমিকার ঠোঁটে চুমু খায়- সে ও
ভাবে আমার কালযাপনের ছায়া।
একদিন মাটিও ছবি তুলতে চেয়েছিল তার নিজের ছায়ার।
তাই আকাশকে ডেকে বলেছিল, তুমি আরও কাছে আনো
তোমার ক্যামেরার জুমল্যান্স। আমিও প্রচারিত হতে চাই-
বলতে বলতে মাটিই স্বাক্ষর করেছিল,
সকল প্রাণকে তার বুকে স্থান দেবার আশ্রয়পত্রে।
উপোসের অমাবস্যা
আমি কখনও-ই ভূগোল-বাণিজ্যের দিকে তাকাই`নি। খুঁজে দেখিনি
লাভ লোকসানের খাতা। বরং যারা সাজিয়েছে স্তরে স্তরে বৈশ্বিক
ব্যবসাপাতি, দূরে থেকেছি তাদের পাত থেকে। কাটিয়েছি নদীর
তীরে তীরে উপোসের অমাবস্যা।
জানি, একদিন খুব বেশি অনাহারী ছিল সৃষ্টির প্রথম ঈগল।
তার চোখের দিকে তাকিয়ে যে কোকিল প্রথম গেয়েছিল
চৈত্রের গান-
সেও ভুলে গিয়েছিল আহারপর্বের কথা।
কোকিলে-ঈগলে প্রেম হয় না জেনেও, যারা শুনতে এসেছিল
জলে লেখা প্রেমগীতি, তারা যাবার সময় বলে গিয়েছিল,
শুরুতে এই পৃথিবীও বহুকাল কাটিয়েছিল উপবাসী সন্ন্যাস।
প্রতিপক্ষের প্রকার
বোবার প্রতিপক্ষ থাকে না, কথাটি সত্য নয় আজকাল আর।
অন্ধেরও প্রতিপক্ষ থাকে- যারা দেখতে পারে, তারাও অনেক
সত্য না দেখে দিনরাত সেজে থাকে স্বেচ্ছান্ধ অথবা
ভাবতে চায় তাদের দুটি চোখে কোনো জ্যোতি নেই এখন আর।
দরিদ্রের প্রতিপক্ষ ধনী,
আর ধনীর প্রতিপক্ষ একটি আবর্জনার নালা।
দরিদ্রের মল-মূত্র নিষ্কাশনের নালাটি দখল না করা পর্যন্ত
ধনীর জীবন কাটে নিদ্রাহীন,
আমাদের স্বত্ব-উপত্যকায়।
এইচআর/এমএস