শূন্য থেকে সফল উদ্যোক্তা হৃদয় হাসান

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মো. হৃদয় হাসান

এখনকার যুগে উদ্যোক্তা হওয়া মানে শুধু ব্যবসা শুরু করা নয়, এটি এক সাহসী যাত্রা। যেখানে প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়। শূন্য থেকে শুরু করে কেবল নিজের বিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল দিয়ে সফলতার চূড়ায় পৌঁছানোর পথ সহজ নয়। তবে শেরপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের মো. হৃদয় হাসান বাস্তবে তা প্রমাণ করেছেন; যদি স্বপ্ন ও কাজের প্রতি নিষ্ঠা থাকে, তাহলে কোনো বাধাই থামাতে পারে না।

১৯৯৫ সালে জন্ম নেওয়া হৃদয় ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন ‘বড় কিছু’ করার। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হবে, সেটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। বাবার সামান্য কৃষিকাজের আয়, সংসারের অভাব-অনটন আর মায়ের আত্মত্যাগ-এসব নিয়েই কেটেছে শৈশব। তবে দারিদ্র্য তাকে দমাতে পারেনি। মা-বাবা শত কষ্টের মাঝেও ছেলেকে শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখতেন।

এসএসসি পাস করার পর উচ্চশিক্ষার খরচ চালাতে হৃদয় চলে আসেন জনমানুষের শহর রাজধানী ঢাকায়। সেখানেই শুরু হয় ‘জীবনযুদ্ধ’। একদিকে চাকরি, অন্যদিকে পড়াশোনার চাপ। ২০১৩ সালে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এই তরুণ। এমনকি, নিজে স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কিছুতেই সফলতার মুখ দেখেননি।

২০২১ সালে সিদ্ধান্ত নেন, নিজের জন্য কিছু করতে হবে। শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে হাতে থাকা সামান্য কিছু টাকা নিয়ে শুরু করেন গ্রামো ফুড (Grammo Food) নামক নিরাপদ ও অর্গানিক খাদ্যের ব্যবসা। প্রথমদিকে প্রতিযোগিতা ছিল তীব্র। বাজারেও ছিল না পরিচিতি। কিন্তু দমে যাননি। নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি ট্রেনিং নেন। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পূর্ণ করেন। নতুন নতুন কৌশল আর কঠোর পরিশ্রমে ব্যবসা এগিয়ে নেন।

মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে হৃদয় হাসানের গ্রামো ফুড (Grammo Food) দেশের অন্যতম পরিচিত নিরাপদ ও অর্গানিক ফুড ব্র্যান্ড। একা শুরু করা প্রতিষ্ঠানে এখন ৪৫ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন হৃদয়। উচ্চশিক্ষার গণ্ডি পেরোনো মেধাবীরা তার প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কৃষক থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করে সেটা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে হৃদয়ের ‘গ্রামো ফুড’।

হৃদয় হাসানের ভাষ্য, ‘ব্যর্থতা মানেই হেরে যাওয়া নয়, বরং নতুন শুরুর সুযোগ। আমি যখন সবকিছু হারিয়েছিলাম, যখন কেউ পাশে ছিল না, তখন একটাই জিনিস মনে হয়েছে, আমার স্বপ্নের কাছে হেরে যেতে পারবো না।’

হৃদয়ের আশা, তার প্রতিষ্ঠান আগামীতে দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ডে রূপ নেবে। যেখানে কাজ করবে হাজারো মেধাবী তরুণ-তরুণী।

শূন্য থেকে সফল উদ্যোক্তা হতে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়, তবে তা অসম্ভব নয়। প্রতিটি বাধা, ব্যর্থতা সফলতার দিকে এক পদক্ষেপ এগিয়ে নিয়ে যায়; যদি নিজের মধ্যে থাকে অনমনীয় বিশ্বাস ও সঠিক পরিকল্পনা। হৃদয় হাসানের গল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যে কেউ কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং সংকল্পের মাধ্যমে শূন্য থেকে শীর্ষে পৌঁছাতে পারে।

জেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।