বছর জুড়ে সমালোচিত ছাত্রলীগ


প্রকাশিত: ০২:৪৩ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

২০১৪ সালের পুরো বছরজুড়ে বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ছাত্রলীগ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ওই সরকারের পাঁচ বছরে ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ছাত্রলীগের একশ্রেণীর নেতাকর্মীর অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজকর্মে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসার পরও একইভাবে ছাত্রলীগের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ছিনতাই, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্ম করে ২০১৪ সালের পুরোটা বছরজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ছাত্রলীগ। তাদের কর্মকান্ডে উত্তপ্ত ছিল প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষক ড. গোলাম মঈনুদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয় ছাত্রলীগের গ্রন্থ ও প্রকাশনা-বিষয়ক সম্পাদক মামুন খানকে। ২০ ও ২১ জানুয়ারি ৭ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে বরিশালে ছাত্রলীগের হাতে মার খায় যুবলীগের এক নেতা।

২৩ ফেব্রুয়ারি খুলনায় সরকারি আযম খান কমার্স কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর একদিন আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকার গ্রামবাসীর সংঘর্ষ বাঁধে। পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ না দেয়ায় ১৯ এবং ২০ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বদরুননেসা কলেজে ছাত্রলীগের নারী কর্মীদের সঙ্গে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিপক্ষ সংগঠন ছাত্রদলের মারামারি ও চুল টানাটানি হয়।

টেন্ডার, চাঁদাবাজি কিংবা আধিপত্য বিস্তারের মতো নিয়মিত ঘটনা নয়, এক রুমের জুতা অন্য রুমে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই গত ৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২ মার্চ বিকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। ৪ মার্চ রাতে জুতা চুরিকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

৬ এপ্রিল বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে নতুন কমিটির পদ দখলকে সামনে রেখে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ৭ এপ্রিল ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসে র‌্যাবের নির্যাতন কেন্দ্র আবিষ্কার ও সেখানে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক নেতাসহ ১২ জন আটক, ৮ এপ্রিল বরিশালে পলিটেকনিক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা, ১০ এপ্রিল সিলেটে রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে ছাত্রদল নেতাকে কোপানো, ১১ এপ্রিল সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

৯ জুন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সবুজ পরীক্ষায় ফেল করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালান তার অনুসারীদের নিয়ে। পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ৩০ মে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ছাত্রলীগ নেতারা হলে গিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তরপত্র বিক্রি করে।

হলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মাওলানা ভাসানী হলে ছাত্রলীগ দু’গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহত হয়। ১৮ আগস্ট আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ছাত্রলীগ দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়। এর মধ্যে তিনজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়।

২৭ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেলকে নিজ ক্যাম্পাসেই ডেকে এনে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ও তার অনুসারীরা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ দু’গ্রুপে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও গুলিবিনিময় হয়।

২৯ অক্টোবর মাগুরায় সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ মাঠে প্রতিপক্ষের হামলায় এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ছাত্র সম্মেলন শেষে চট্টগ্রাম ফেরার পথে রাতে চট্টগ্রামমুখী মেইল ট্রেনের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মোস্তাফিজুর রহমান তৌকির নামে এক ছাত্রনেতাকে মেরে আহত করে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করে প্রতিপক্ষ।

২০ নভেম্বর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত হয়েছেন একজন। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেয় প্রশাসন। নিহত সুমন চন্দ্র দাস সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র ছিল।

সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর বকশীবাজারে ছাত্রলীগের সাথে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বিএনপির বড় নেতাদের নেড়ি কুত্তার মতো পিটানোর হুমকি দিয়ে সমালোচিত হন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।