‘বিদেশি সহায়তা কমায় চ্যালেঞ্জর মুখে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৩২ এএম, ২৯ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে বৈদেশিক সহায়তা হ্রাসে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা কার্যক্রম এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি একটি সতর্কবার্তা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন সময় এসেছে স্থানীয় উদ্ভাবনের মাধ্যমে নেতৃত্ব দেওয়ার, অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদকে কাজে লাগানোর।

সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর মহাখালির ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা আরও বলেন, টেকসই অগ্রগতির জন্য আত্মনির্ভরশীলতা, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং ন্যায্য, মর্যাদা ও জাতীয় মালিকানার ওপর ভিত্তি করে সরকার-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ নাগরিক সংগঠকদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারত্ব প্রয়োজন কেবল নির্ভরতা নয়।

‘উন্নয়ন তহবিল খাতের পট পরিবর্তনে কমিউনিটি সহায়তা জোরদারকরণ’ বিষয়ক এই বৈঠকের আয়োজন করে একশনএইড বাংলাদেশ। এতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন (সিএসও), জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা, জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, নীতি বিশ্লেষকসহ উন্নয়ন খাতের গবেষকরা অংশ নেন।

আলোচনায় বক্তারা উন্নয়ন তহবিলের পরিবর্তিত ধরন, বৈদেশিক সহায়তা হ্রাসের প্রভাব এবং সিএসওদের টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা পালনে সরকারের সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পরিবর্তিত এই সংকট মোকাবিলায় নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোর (সিএসও) ভূমিকা পুনর্মূল্যায়ন, কৌশলগত পদক্ষেপ এবং টেকসই অর্থায়নের বিকল্প পথ খুঁজে বের করার ওপর জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির। তিনি বলেন, পরিবর্তিত বৈশ্বিক অর্থায়নের কারণে আমাদের কমিউনিটিগুলো, বিশেষত নারী ও শিশুরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবিরে এর প্রভাব স্পষ্ট। বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে এখন আমাদের নিজেদের সম্পদ কাজে লাগাতে হবে। ক্রাউডসোর্সিং, সিএসআর সম্প্রসারণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে আমরা কমিউনিটিকে শক্তিশালী করতে পারি।

ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর কেএএম মোর্শেদ বলেন, তহবিলের পরিবর্তিত প্রকৃতির কারণে অভ্যন্তরীণ তহবিল গঠন জরুরি। এনজিও এবং কমিউনিটির মধ্যে আস্থার ঘাটতি দূর করতে সিএসওদের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রভাব প্রমাণ করতে হবে। সরকারি সমন্বয়, এআই ব্যবহার, এবং জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সিএসও ফলাফল সংযুক্ত করা অপরিহার্য। তিনি অনুদানে কর ছাড়, পিপিপি-তে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো এবং ছোট এনজিওদের জন্য সংগ্রহ নীতি সংস্কারের আহ্বান জানান।

নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এস এম মনজুরুল হান্নান খান বলেন, আমাদের অন্যান্য নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ও সক্ষমতার অভাবে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের মতো জলবায়ু অর্থায়ন পেতে সজ্জিত নয়। পরিবেশ অধিদপ্তরে বাজেট অপ্রতুল (মাত্র ০.৩৮%) এবং সিএসও-সরকার সমন্বয় দুর্বল। শক্তিশালী সহযোগিতা ও কমিউনিটি প্রতিনিধিত্ব জরুরি।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, এলডিসি উত্তরণের জন্য সরকারের সম্মুখ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজিতে সিএসওদের অংশগ্রহণের সুস্পষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রাসঙ্গিকতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, করের ফাঁক পূরণ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়া, খরচ কমানো, দ্বৈততা এড়ানো এবং প্রযুক্তিভিত্তিক মানবিক কাজ গ্রহণ করা উচিত।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন খান বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের নামে ওডিএ (অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্টেন্স) সংকুচিত হচ্ছে, তবে আইসিজে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাসটিস) -এর সাম্প্রতিক রায় নতুন সুযোগ এনেছে। আমাদের নির্গমনকারীদের ওপর কার্বন ট্যাক্সের জন্য চাপ দিতে হবে, প্রকৃতি-বান্ধব অনুদান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সহায়তা মডেলগুলোকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।

আরএএস/এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।