ব্যালটে নৌকা ছাড়া হতে চলেছে তৃতীয় নির্বাচন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৫ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতীকী ছবি

উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই প্রভাব রেখেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে অনুষ্ঠিত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দুটি নির্বাচন বর্জন করেছিল দলটি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। এ অবস্থায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।

ফলে আগামী ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠিব্য নির্বাচন হিসাবে ধরে তৃতীয়বারের মতো ভোটের বাইরে থাকছে জনসমর্থনের দিক থেকে বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটি।

এর আগে ১৯৮৮ (চতুর্থ) ও ১৯৯৬ সালের (ষষ্ঠ) সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ। আর এবার নিষেধাজ্ঞা ও স্থগিতাদেশ থাকায় ভোটের বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। সব মিলিয়ে ১৩টি নির্বাচনে ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীক ছাড়া তিনবার ভোট হতে চলেছে।

এবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি দেশের ভেতরে আইনে হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, ভোটের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ও নিজ ভোটার এলাকার বাইরে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের পোস্টাল ভোটিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। ভোটের আগেই অ্যাপে নিবন্ধতদের কাছে ১১৮টি প্রতীকসহ ব্যালট পেপার ডাকযোগে পাঠানো হবে। তবে নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় পোস্টাল ব্যালটে থাকছে না নৌকা প্রতীক।

ফিরে দেখা ১২টি সংসদ নির্বাচন
>>৭ মার্চ, ১৯৭৩: বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। সেই নির্বাচনে ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন পেয়েছিল দলটি।

>>১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯: দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুল মালেক উকিলের নেত্বত্বে আওয়ামী লীগ ভোটে অংশ নিয়ে ৩৯টি আসন পেয়েছিল। সেবার ২০৭ আসনে জয় নিয়ে সরকারে এসেছিল বিএনপি।

>>৭ মে, ১৯৮৬: তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে এবং ভোটে অংশ নেওয়া নিয়ে বিতর্কে ১৫ দলে ভাঙন দেখা দেয়। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন পায়। তবে নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি।

>>১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ: চতুর্থ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ দল বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচেন ২৫১টি আসনে জয় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি।

>>২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১: অস্থায়ী সরকারের অধীনে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট অংশ নেয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয় বাংলাদেশ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনা আর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে ১৪২ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি।

>>১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬: আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০০ আসনেই জয় পায় বিএনপি। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট সংসদ ছিল সেটি।

>>১২ জুন, ১৯৯৬: সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪৬টি আসনে জিতে ২১ বছর পর সরকার গঠনের সুযোগ পায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

>>১ অক্টোবর, ২০০১: মেয়াদ পূর্ণ করার পর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ১৯৩ আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট। আওয়ামী লীগ ৬২টি আসনে জয় পায়।

>>২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮: নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভূমিধস বিজয় লাভ করে। ওই নির্বাচনে ২৩০ আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৬৩ আসন নিয়ে সরকার গঠন করে মহাজোট। বিএনপির ৩০টি মিলিয়ে চার দলীয় জোট আসন পেয়েছিল ৩৩টি।

>>৫ জানুয়ারি, ২০১৪: বিএনপি ও কয়েকটি বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নিরঙ্কুশ সংখ‌্যাগরিষ্ঠতা পায়।

>>৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮: নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পায় ২৮৮ আসন।

>>৭ জানুয়ারি ২০২৪: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ ১৬টি দল ভোট বর্জন করে।

>>ফেব্রুয়ারি ২০২৬: অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত্য এ নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের সম্ভাব্য সময় দিয়েছে সরকার। নিবন্ধন স্থগিত থাকায় এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না আওয়ামী লীগ।

তফসিল থেকে ভোট, এবার ব্যবধান কতদিন
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত প্রায় দুই মাস বা ৬০ দিন ব্যবধান রাখা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ভোটের পথে তফসিল থেকে ভোটের দিনের ব্যবধান প্রথম সংসদ নির্বাচনে ৬০ দিন, দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৪ দিন, তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৭দিন, চুতর্থ সংসদ নির্বাচনে ৬৮ দিন, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৫২ দিন, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ৩৯ দিন, সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৪৭ দিন, অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন, নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৭ দিন, দশম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪৯ দিন ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ছিল ৫২ দিন।

সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, আর ভোট হয় পরের বছরের ৭ জানুয়ারি; ব্যবধান ছিল ৫৩ দিন। মনোনয়নপত্র জমার সময় ছিল ১৪ দিন, বাছাই ছিল ৪ দিন, প্রত্যাহারের শেষ সময়ের জন্য ছিল ১৩ দিন (এরমধ্যে আপিল দায়ের ৫ দিন, নিষ্পত্তি ৬ দিন)। আর প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণার সময় ছিল ১৯ দিন এবং প্রচার শেষের ৪৮ ঘণ্টা পর ভোট। সেই ভোটগ্রহণ হয় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

তবে এবার সংসদ ভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এমওএস/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।