অভিযোগ শিল্পীদের
হুমকির পরও উদীচী কার্যালয়ে হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ সরকার
বিভিন্ন মহল থেকে সুস্পষ্ট হুমকি থাকা সত্ত্বেও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতারা। তারা বছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার বাইরে গিয়ে এই সরকার কার্যত মৌলবাদী অপশক্তির তাঁবেদারি করছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশে এসব অভিযোগ তোলেন উদীচীর কর্মীরা। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে দেশের সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে উদীচীর শিল্পীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি তোপখানা রোড হয়ে সত্যেন সেন চত্বরে (জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে) গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শিবাণী ভট্টাচার্য্যের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ, সংগঠন বিষয়ক সম্পাদক শেখ আনিসুর রহমান এবং সিপিবি ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল।
সমাবেশে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটে। এর পরপরই উদীচীর ওপর সরাসরি হামলার হুমকি দেওয়া হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার আশঙ্কা ছিল।
তিনি বলেন, সবকিছু জানা থাকার পরও উদীচীর নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার বা প্রশাসন। ফলে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিনা বাধায় উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ চালাতে পেরেছে। এ ঘটনায় উদীচীর ৫৭ বছরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, বাদ্যযন্ত্র ও আসবাবপত্র পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন
উদীচীর ঢাকা অফিসে আগুন
গণমাধ্যম-বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা অনভিপ্রেত ও উদ্বেগজনক
অমিত রঞ্জন দে আরও বলেন, স্বাধীনতার আগ থেকেই এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে উদীচী সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে। মহান মুক্তিযুদ্ধেও উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। জাতীয় জীবনে দুর্যোগ, অধিকার হরণ কিংবা শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে উদীচী সব সময় সাংস্কৃতিক হাতিয়ার নিয়ে রাজপথে নেমেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীর বিজয়নগরে আততায়ীর গুলিতে ওসমান হাদি আহত হওয়ার ঘটনায় যে ঘৃণ্য রাজনীতি ও মৌলবাদী তৎপরতা শুরু হয়, তারই শিকার হয়েছে উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান।
সমাবেশে সংগঠনটির সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ বলেন, যারা হাদির হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়েছে, যারা দেশজুড়ে মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ-তাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত বিক্ষুব্ধ জনতার কোনো শব্দ নেই। এর মানে তারা বিচার চায় না, বরং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চায়।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে এই অপশক্তি প্রমাণ করেছে, তারা বাংলাদেশে শান্তি ও নিরাপত্তা চায় না। তারা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, যাতে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ সহজ হয়।
সমাবেশে উদীচীর নেতারা আরও বলেন, এ দেশের মানুষ এসব ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হতে দেবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত যে বৈষম্যমুক্ত ও বাকস্বাধীনতাভিত্তিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মানুষ রাজপথে নেমেছে, সে লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হবে। কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ষড়যন্ত্রে তা ব্যর্থ হবে না।
এমডিএএ/কেএসআর