‘মা হয়ে বাবার জীবন্ত মুখটা ছেলেকে চেনাতে পারিনি’


প্রকাশিত: ০৭:৩৫ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অনাগত সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে জানতেন না মেজর মো. মমিনুল ইসলাম সরকার। ছেলে হলে নাম কী রাখবেন আর মেয়ে হলেই বা কী রাখবেন, তা ঠিক করে রেখেছিলেন। তবে সন্তান জন্মের ঠিক ১১ দিন আগে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে (পিলখানা) বিপথগামী কিছু বিডিআর জওয়ানের হামলায় নিহত হন মমিনুল ইসলাম।

স্বামীর মৃত্যুর মাত্র ১১ দিন পরই ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন মমিনুলের স্ত্রী সানজানা সোনিয়া জুবাইদা। বাবার পছন্দ অনুযায়ী ছেলের নাম রাখেন তিনি সাদাকাত সাবরি বিন মমিন।

সাদাকাত বাবাকে কখনো দেখেনি। যে ঘটনার জন্য সাদাকাতের বাবা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তেমন ঘটনাও বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি।  

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমৃত্যু বাবার দায়িত্ব পালনের গৌরব ও প্রবল দেশাত্মবোধের আদর্শের কথা শুনে শুনে ৮টি বছর পার করেছে সাদাকাত।

পিলখানা ট্রাজেডিতে নিহত অন্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মো. মমিনুল ইসলাম সরকারকেও দাফন করা হয়েছে বনানীর সামরিক কবরস্থানে।  

শনিবার সকালে মা-ফুফু ও খালা-খালুদের সঙ্গে বাবার স্মৃতিস্তম্ভে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় সাদাকাত।

সাদাকাত তার মায়ের সঙ্গে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে থাকে। জন উইলসন স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র সে।

শনিবার দুপুরে সামরিক কবরস্থানে সাদাকাত জাগো নিউজকে বলে, ‘আমার আব্বুকে আমি দেখিইনি। আমার ‘সাদাকাত’ নামটি আব্বুই ঠিক করে গিয়েছিল। আমি ভীষণ মিস করছি আব্বুকে। বড় হলে আমিও বাবার মতো সেনা অফিসার হবো।’

মা সানজানা সোনিয়া জুবাইদা জাগো নিউজকে বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় স্বামীকে হারিয়েছি। মা হয়ে জন্মদাতা বাবার জীবন্ত মুখ ছেলেকে চেনাতে পারিনি। এ যে ভীষণ কষ্টের তা ক’জনই বা বোঝে।’
 
তিনি আরো বলেন, একেকটা দিন পাথর চাপা কষ্ট নিয়ে ছেলেকে তিলে তিলে বড় করেছি। আগামী ৭ মার্চে ৯ বছরে পা দেবে সাদাকাত। ওকে সব সময় পজিটিভ কথায় প্রভাবিত করার চেষ্টা করি। যাতে করে ওর মধ্যে বাবার নির্মম বিদায়ের কোনো ছাপ না পড়ে।

সানজানা বলেন, বাবা হত্যার বিষয়ে কিংবা বিচারের বিষয়ে কোনো কথাই সাদাকাতকে বলি না। তবুও প্রায়ই সাদাকাত বলে ওঠে, আমি আর্মি অফিসার হবো। বাবার মতো। বাবাকে যারা খুন করেছে তাদের খুঁজে এনে গুলি করে মারবো।

স্বামী হত্যার বিচার প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। রাষ্ট্রপক্ষের দুর্বলতা রয়েছে বলেই বিচারে এতো সময় লাগছে।

জেইউ/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।