‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’
মাথার ওপর গনগনে রোদ, কখনো-বা ভোল পাল্টে আকাশ কালো করে নামছে ঝুম বৃষ্টি। বৈশাখ আসছে, আবহাওয়ার মতিগতি বোঝা বড় দায়। পুরাতনকে মুছে ফেলে নতুনকে জয় করতে প্রস্তুত সবাই। বসে নেই প্রকৃতিও, নতুনভাবে সাজতে শুরু করেছে তারাও।
চলতি বছরের সকল গ্লানিকে মুছে ফেলে নতুনকে জয় করার দীক্ষা নিয়েছে সকলে। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ কিংবা সাম্প্রদায়িকতা নয়, ১৪২২ সাল হবে বিজ্ঞানমনস্ক ও মুক্তমনাদের। তাইতো এবারের পহেলা বৈশাখের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’।
এসো হে বৈশাখ এসো এসো হে! বাঙালির প্রাণের অন্যতম মহোৎসব পহেলা বৈশাখ। দিবসটিকে সাদরে বরণ করে নিতে ইতোমধ্যে সারাদেশে শুরু হয়েছে উৎসবের নানা প্রস্তুতি। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, পুরান ঢাকা, রমনা পার্কসহ রাজধানীর পুরো অঙ্গনে দিবসটিতে থাকে অন্যরকম এক আবহ।
প্রবাহমান ধারায় নানা লোকাচার উৎসবে প্রাণ পেয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে বাঙালির কৃষ্টি। বাঙালির প্রাণের এই উৎসব মূলত বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার প্রতীকী উপস্থাপনা। এই দিনটিতে বাংলাদেশের মানুষ বাঙালিত্বের মন্ত্রে দীক্ষিত হয় আরও একবার।
বৈশাখের প্রথম দিনটিকে ঘিরে গান-বাদ্য আর উৎসব আমেজে মেতে ওঠা বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য। দিনটিকে সাদরে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। কারণ পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হবে এখান থেকে। আবার শিক্ষার্থীদের তৈরি নানা জিনিস বিক্রি করেই হয় পহেলা বৈশাখের আয়োজন।
এই বছর পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নেতৃত্বে থাকছে চারুকলার ১৬তম ব্যাচ। এছাড়া অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরাতো আছেই। আর তাদের এই পরিশ্রমের দেখভাল করছেন চারুকলার শিক্ষকরা।
পহেলা বৈশাখের এই দিনে রাজধানীও সাজে নতুন সাজে। রাজধানীতে পহেলা বৈশাখের মূল আয়োজনে থাকে রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতি আয়োজন। যেখানে বিশুদ্ধ সুরের ছোঁয়ায় মানুষ তার আপন সত্তা খুঁজে পায়।
এছাড়া নতুন বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছায়ানটের প্রভাতি আয়োজন শেষ হতেই মানুষের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে এই শোভাযাত্রায়। আর এর বিশেষত্ব হলো প্রতি বছর সমসাময়িক বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন থিম ফুটিয়ে তোলা ।
মঙ্গল শোভাযাত্রা সার্থক করে তুলতে চারুকলাজুড়েই চলছে জোর প্রস্তুতি। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় সূর্য্যের আলোকে প্রাধান্য দিয়েই কাজ করছে চারুকলা অনুষদ। এছাড়া সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যঙ্গ করে একটি মোটিফ থাকছে। যেখানে দেখা যায় একটা বিশাল হাত দুই আঙ্গুল দিয়ে গলা টিপে একটি মানুষকে মেরে ফেলছে।
চারুকলায় প্রবেশ করেই দেখা যায় বাঁশের চটা বেঁধে শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছেন বাঘ, হাঁস, বিড়াল, শখের হাঁড়ি, শিশু হরিণ, পেঁচা, কাগুজে বাঘ, ছোট-বড়-মাঝারি আকৃতির তুহিন পাখিসহ দারুণ সব মোটিফের কাঠামো। এছাড়া বিক্রির জন্য বিভিন্ন সাজ-সজ্জার জিনিস তৈরি করছে তারা।
সকলেই ব্যস্ত যার যার ওপর অর্পিত কাজে। কেউ ছবি আঁকছেন, কেউ মুখোশ গড়ছেন, কেউবা আবার হাঁড়ি-পাতিলের ওপর কারুকার্য তৈরি করছেন। সেগুলোই কিছুক্ষণ পর টাঙানো হচ্ছে দেয়ালে। চমৎকার এসব শিল্পকর্ম অপরূপ সৌন্দর্য্যে সাজিয়ে তুলেছে পুরো চারুকলা প্রাঙ্গণকে।
খুব বেশি দূরে নয়, দ্রুতই এগিয়ে আসছে পহেলা বৈশাখ। আর এই দিবসটিকে রাঙিয়ে তুলতে রং-তুলি নিয়ে মেতে আছেন নবীন শিল্পীরা। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারকে ঘুচিয়ে নতুন করে এই বাংলাকে রাঙাবে পহেলা বৈশাখ, এমই প্রত্যাশা সকলের।
এসএস/বিএ/পিআর