ছয় বছরেও হয়নি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট


প্রকাশিত: ১০:৩৯ এএম, ২৫ মে ২০১৫
ফাইল ছবি

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এমন কথা বলা হলেও গত ছয় বছরেও গঠিত হয়নি ‘পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম ইউনিট’(পিবিসিটি)। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এনিয়ে কাজ করলেও আটকে আছে এ বিশেষ বাহিনী গঠন প্রক্রিয়া।

তবে সরকারের উচ্চমহল থেকে বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে সার্বিক আলোচনা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাহিনীটির কার্যক্রম শুরু হবে। সরকারের সব বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হবে বিশেষ ওই বাহিনী। যদিও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম আলোচনা হয় ২০০৯ সালে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারি আগ্রহে উৎসাহিত হয়ে একটি প্রস্তাবও দিয়েছিল পুলিশ বিভাগ। প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই শেষে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় ঝুলে আছে চার বছর ধরে। সূত্রটির দাবি, অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রস্তাবটি ঝুলে আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্লগার হত্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যা, পীর, টিভির ইসলামি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হত্যা, জেএমবি সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর জড়িত থাকার কথা উঠে আসে। সম্প্রতি কয়েকজন মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার হত্যার ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে জঙ্গিবাদের তৎপরতার বিষয়ে। তবে জঙ্গি তৎপরতা ঠেকানো ও খুনিদের হদিস খুঁজে বের করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর তৎপরতার ধরনে পরিবর্তন এসেছে। ভার্চুয়াল জগতকেন্দ্রিক তাদের আনাগোনা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ রক্ষা করছেন তারা। কোনো জঙ্গি সদস্য ধরা পড়লেও যেন কৌশলগত ক্ষতি না হয় সেজন্য গঠন করছে স্লিপার সেল। এসব সেলের মধ্যে কারো সঙ্গে কারো বিশেষ পরিচয় থাকে না। সে কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠীর জড়িত থাকার তথ্য মিললেও গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না কাউকে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে গোয়েন্দা বাহিনীগুলো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে দাবি গোয়েন্দা সূত্রটির। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন প্রক্রিয়াটিও নতুন করে শুরু হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রথম জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও মনিটরিং সেল গঠিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি ইউনিট, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই), অন্যান্য সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সেলের সদস্য করা হয়। সেসময় সেলটি সুষ্ঠু তদারকির অভাবে দ্রুত জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটছে বলে সরকারকে অবজারভেশন দেয়।

স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পর আল কায়েদার পরবর্তী টার্গেট হতে পারে বাংলাদেশ, এমন একটি বার্তা ২০১০ সালের প্রথম দিকেই ১১১টি প্রভাবশালী রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছিল।

ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান অধ্যুষিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সে ঝুকি রয়েছে জানিয়ে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার ও বিশেষ বাহিনী গঠনেরও তাগাদা দেয় দেশগুলো।

এরপর পুলিশ সদর দফতরের প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ (পরিকল্পনা ও গবেষণা) শাখা ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট একটি নতুন ইউনিট গঠনের প্রস্তাব পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বেশকিছু সংশোধনী আনা হয়। ইউনিটের নাম চূড়ান্ত হয় ‘পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (পিবিসিটি)’।

তবে জনবল, পদকাঠামো, যানবাহন-সরঞ্জামাদির বিষয়গুলো চূড়ান্ত হওয়ার পরও অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের সব বাহিনীর চৌকস, মেধাবী ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বাহিনীটি গঠিত হবে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠনে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। অচিরেই বাহিনীটি আত্মপ্রকাশ করবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট প্রয়োজন। যারা সার্বক্ষণিকভাবে তাদের ওপর নজরদারি করবে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপনের পর বর্তমানে প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহসান জাগো নিউজকে বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কার্যক্রম শুরু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পুলিশে উন্নত ও আধুনিক প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। সরকার চাইলে শিগগিরই ইউনিটটি কাজ শুরু করতে পারে।

জেইউ/বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।