প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা

পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম/ছবি জাগো নিউজ

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। এ কারণে সেদিন পুলিশ অ্যাকশনে যায়নি।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রথমে প্রথম আলো ভবন, পরে ডেইলি স্টারে হামলা। এরপর উদীচীতে হামলা হলো; এসব ঘটনা ঠেকাতে ডিএমপি সক্ষম না অক্ষম- এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সক্ষম। সবসময় সব ঘটনা আমরা কার্ভ করতে পারবো বিষয়টা এমন না। বিগত দিনের কথা বলি- যখন পাবলিক সেন্টিমেন্ট গ্রো করে তখন রিইনফোর্সমেন্ট করার জন্য রাষ্ট্রীয় যে সক্ষমতা রাষ্ট্র সর্বোচ্চ পর্যায়ে তা ব্যবহার করে। কারওয়ান বাজারের যে অবস্থা ছিল আমরা অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। যদি পুলিশ দুই-চারজন সেদিন নিহত হতো...

তিনি বলেন, মাত্র এক বছর আগে পুলিশ ট্রমা থেকে বের হয়ে এই পর্যায়ে এসেছে, সামনে নির্বাচন, এই অবস্থায় পুলিশের যদি আবারও ক্যাজুয়ালিটি হয় তখন এই পুলিশ নিয়ে সামনে এগুতে পারবো না। যে কারণে আমরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারি নাই। এ কারণে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এত বড় ইন্সিডেন্টের আমাদের একটা অ্যাচিভমেন্ট। কোনো ধরনের ক্যাজুয়ালিটি ট্যাকল দেওয়া গেছে। সম্পদ কিছু গেছে তা পূরণ করা সম্ভব, কিন্তু হিউম্যান লাইফ যখন লস্ট হয় তা কোনো কিছুর বিনিময়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। যে কারণে অ্যাকশনে যায়নি পুলিশ।

তার মানে সেদিন আপনারা কোনো অ্যাকশনে যাননি- এমন প্রশ্নে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, যতটুকু প্রয়োজন মনে করেছি, যতটুকু আমাদের অবস্থা ছিল। সর্বোচ্চ অ্যাকশন গুলি করা পর্যন্ত যেতে পারতাম আমরা কিন্তু তা আমরা অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করেছি। কারণ চার-পাঁচ হাজারের মতো যে জনতা ছিল সেখানে ৫০-১০০ জন ফোর্স নিয়ে অ্যাকশনে গেলে আমার পুলিশ ও পাবলিক উভয়ের ক্যাজুয়ালিটি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থান-কাল-পাত্র ভেদে অ্যাকশন নিতে হবে। ইচ্ছা করলেই সব জায়গায় ফায়ার ওপেন করতে পারবো না, এটা উচিতও না।

হামলা-অগ্নিসংযোগ চলে ভোর ৫টা পর্যন্ত, তাহলে সেদিন পুলিশ কখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়- এই প্রশ্নে নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ঘটনার আগেই পৌঁছায়, তারপর প্রটেক্ট করার চেষ্টা করছে। পুলিশ বাধা দিয়েছে, পুলিশ পারে নাই, এক পর্যায়ে হামলা না করার জন্য পুলিশ মাফ চেয়েছে হামলাকারীদের কাছে; কিন্তু আমাদের অ্যাকশন নেওয়ার মতো সেখানে অবস্থা ছিল না।

গুলির আগে যেসব বিষয় থাকে পুলিশ সেগুলো কেন করেনি? এমন প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্যাস মারা, সাউন্ড গ্রেনেড মারা ওখানে সেই পরিস্থিতি ছিল না। পুলিশের ক্যাজুয়ালিটি হতো।

পরবর্তীসময় যদি কোনো ঘটনায় পাঁচ-দশ হাজার লোক হয় সেখানেও কি আপনারা ব্যর্থ হবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যদি অ্যাডভানস ইনফরমেশন পাই সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ পুলিশের পাশপাশি র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মাঠে আছে, সবাই কাজ করছে। এরপরই সংসদ ভবন এলাকা ও শাহবাগে বড় জমায়েত হলো আমরা কাউকে কিছু করতে দিই নাই। আমরা এইটা ট্যাকেল দিছি।

ঘটনাগুলো ঘটার আগে খুব সুপরিচিত ব্যক্তিরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলছে ‘ওখানে যাও যেয়ে ভেঙে আসো, আগুন দিয়ে আসো’। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, ভুল তথ্য যখন প্রচার হচ্ছে তখন কাউন্টার প্রচার যদি সাংবাদিকরা করেন তাহলে জনগণ সচেতন হবে।

তিনি বলেন, প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় একটা মামলায় চারটি আইন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফেসবুকে উসকানি দেওয়ায় সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, এরপর স্পেশাল পাওয়ার, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও সন্ত্রাসবিরোধী অ্যাক্টে মামলাটি হয়েছে। অর্থাৎ শক্ত একটি মামলা হয়েছে।

টিটি/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।