টিকাদানের প্রথম দিনে হজযাত্রীদের চরম দুর্ভোগ
‘হজযাত্রীদের মানুষ এতো কষ্ট দেয়? একটা মাত্র রুম। পুরুষ মহিলার জন্য কোন পর্দার ব্যবস্থা নাই। একই রুমে নার্সরা টিকা দিচ্ছেন, ডাক্তাররা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট লিখছেন। পরীক্ষা নিরীক্ষায় কয়েক মিনিট করে সময় ব্যয় হওয়ায় বাইরে লম্বা লাইনে অপেক্ষমান অসংখ্য নারী, পুরষ ও শিশুরা গরমে ঘেমে অস্থির। সবার জন্য না হউক, অন্তত বৃদ্ধ মানুষের জন্য তো দু চারটা রুমে ডাক্তার নার্স বসিয়ে একটু কষ্ট কমানো যেতো।’
মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার ভবেরচর গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন (৬০), তার স্ত্রী আয়েশা বেগম (৫০) ও স্ত্রীর বড় বোন সালেহা বেগমকে সাথে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হজে যাওয়ার আগে ম্যানেনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা এবং স্বাস্থ্য সনদ নিতে এসেছিলেন।
ভোর সাড়ে ৬টায় রওনা হয়ে নির্ধারিত সময় ৮টার পর হাসপাতালে উপস্থিত হন। হাসপাতালের দোতলায় অভ্যর্থনা কেন্দ্রে এসে নাম ও পাসপোর্ট নম্বর লেখিয়ে হেলথ কার্ড নিয়ে যখন লাইনে আসেন তখন তাকিয়ে দেখেন সামনে অসংখ্য মানুষের ভীড়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সকাল ১১টায় টিকা দিয়ে স্বাস্থ্য সনদ নেয়ার কাজ শেষ করেন।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর দোতলা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জাগো নিউজের সঙ্গ আলাপকালে মনির হোসেন বিরক্তি প্রকাশ করে ওপরের কথাগুলো বলেন।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে মনির হোসেনের কথাগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়। হাসপাতালের দোতলায় ২০২ নম্বর কক্ষটিতে হজযাত্রীদের টিকা ও স্বাস্থ্য সনদ দিচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। হাতেগোনা কয়েকজন ডাক্তার ও নার্স আগত বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীদের দুই ধরনের টিকা ও স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে সনদ লিখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।
অনেক পর্দানসীন মহিলা পুরুষদের সামনে টিকা নিতে বিব্রতবোধ করছেন। রুমের বাইরে করিডোর জুড়ে অসংখ্য নারী, পুরুষ ও শিশু হজযাত্রীদের উপচেপড়া ভীড়। কিছু চেয়ার ও বেঞ্চে সীমিত সংখ্যক যাত্রী বসার সুযোগ পেলেও অধিকাংশই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে গরমে ঘামছিলেন।
যে কক্ষটিতে টিকা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে সে কক্ষের বাইরে প্রথমে হজযাত্রীদের নাম, পাসপোর্ট ও সিরিয়াল নম্বর লিখে স্বাস্থ্য কার্ড দেয়া হচ্ছে। কর্তব্যরত একজন জানালেন, সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান করা হয়েছে।
ইসলামি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয়দানকারী এ কে মোমতাজ খান স্ত্রী জাহান আরা আরজুকে সঙ্গে নিয়ে টিকা দিতে ও স্বাস্থ্য সনদ নিতে এসেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন ৮টায় সময় দেয়া হলেও ডাক্তাররা দেরী করে আসায় কাজ শুরু করতে করতে ৯টা বেজে যায়।
তিনি বলেন, এত বড় হাসপাতাল, কয়েকটি কক্ষে মহিলা ও পুরুষদের পৃথক কক্ষে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করলে ভাল হতো।
হামিদা খাতুন এক বৃদ্ধা একটি বেঞ্চে বসে দরদর করে ঘামছিলেন। দেখা যায়, বৃদ্ধাসহ মোট ৮জন মুন্সীগঞ্জ থেকে এসেছেন। নাম জিজ্ঞাসা করে বয়স কত জিজ্ঞেস করলে বৃদ্ধা হেসে বলেন, কী জানি বাবা, বয়স কইতে পারতামনা। তিনি জানান, সকাল ৮টায় হাসপাতালে আসলেও তখনও পর্যন্ত টিকা দিতে পারেননি। হঠাৎ গরমে অসুস্থবোধ করায় তার নাতি ধরে এনে ফ্যানের নীচে বেঞ্চে বসিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বুধবার থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ঢাকা জেলা ও মহানগরীর হাজিদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর নির্ধারিত ৭টি কেন্দ্রে হজযাত্রীদের টিকাদান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রগুলো হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ সচিবালয় ক্লিনিক।
সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক দেশের হাজিকে সৌদি আরব যাওয়ার আগে নিজ দেশ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে এ দুই ধরনের টিকাদেয়াসহ চিকিৎসকের দেয়া আন্তজার্তিক স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করতে হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (হজ) ড.আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ২১ জুলাই হজ এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (হাব)সভাপতিকে দেয়া এক চিঠিতে সরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও দুই ধরনের টিকাদেয়ার পর স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ ও তা হাজিদের কাছে সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন। সৌদিআরব রওয়ানার আগে বিমানবন্দরে এ স্বাস্থ্যসনদ প্রদর্শন করতে হবে।
অন্যান্য জেলার হাজিদের জন্য বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা শহরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে ১০ হাজার ও বেসরকারিভাবে ৯১ হাজার ৭৫৮ জন যাবে। চলতি বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এমইউ/এআরএস/এসকেডি/আরআইপি