করোনাভাইরাস : প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ নির্দেশনা
জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে তুলে নেয়া হয়েছে লকডাউন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে সব ধরনের কার্যক্রম। এবার আরও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে জনগণ, দলীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের পাঁচটি নির্দেশনা প্রতিপালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার এই নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার রাজধানীতে সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবন থেকে মেট্রোরেল প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এই নির্দেশনার কথা জানান তিনি।
নির্দেশনাগুলো হলো
১. অফিস আদালত, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সংক্রমণ রোধের কার্যপদ্ধতি অনুসরণ।
২. গণপরিবহনে চলাচলের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা।
৩. জনসম্মুখে সব সময় মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলা।
৪. দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এবং তা প্রতিপালনে জনগণকে সচেতন করবেন।
৫. স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা অঞ্চলভিত্তিক তদারকির মাধ্যমে সংক্রমণ রোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণেও ভূমিকা রাখবেন। আপদকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অসহায় দুস্থ মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।
স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা সংক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পদক্ষেপ দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। সরকার সাধারণ ছুটি তুলে নেয়ার সময় এবং আগে-পরে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, 'কিন্তু দুঃখজনক হলেও কিছু কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে শৈথিল্য প্রদর্শন করছে, যা সংক্রমণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এ অবহেলা নিজের জন্য শুধু নয়, পরিবার, সমাজ তথ্য অন্যদের জন্যও ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।'
দেশে করোনার ক্রমঅবনতিশীল পরিস্থিতিতে সরকার সংক্রমিত এলাকা এবং এর নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে এলাকাভিত্তিক বা জোনে বিভক্ত করার বিষয়টি ভাবছে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, 'সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার এ সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার জনগণের পাশে আছে সবসময়। ক্রমঅবনতিশীল এ পরিস্থিতিতে সরকার সংক্রমিত এলাকা এবং এর নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে এলাকাভিত্তিক বা জোনে বিভক্ত করার বিষয়টি ভাবছে। বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে কাজ করছে। কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের ঘনত্ব, সংক্রমণের মাত্রা, রোগীর সংখ্যা, পার্শ্ববর্তী এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা, টেস্ট ফ্যাসিলিটি, চিকিৎসা সুবিধাসহ নানা বিষয় এর সাথে জড়িত। বিস্তারিত পরিকল্পনা পাওয়া গেলে যাচাই-বাছাই করে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংকট সমাধানে বিরোধী দলগুলো নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। করোনা তহবিল গঠন, ত্রাণ কার্যক্রম, করোনা ক্যাম্প চালুসহ সরকারকে সহায়তা ইত্যাদি। আমরা সব রাজনৈতিক দলকে সরকারকে সহায়তা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু বিএনপি সার্কাসের হাতির মতো সমালোচনার বৃত্তেই আবর্তিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সংকটকে শেখ হাসিনার সরকার সম্ভাবনায় রূপ দিতে নিরলস কাজ করছে। বিএনপি সংকটকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সব নির্দেশনা প্রতিপালন এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে করোনাবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। অতীতের যে কোনো দুর্যোগের মতো আমাদের ঐক্যবদ্ধ, সাহসী ও মানবিক প্রয়াস সংকট উত্তরণের পথ সুগম করব।'
গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
অধিকাংশ গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আবার বেশকিছু অভিযোগও আমরা পাচ্ছি। আমি প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ করছি ওই সব এলাকায়। অর্ধেক বা তার চেয়ে কম যাত্রী নিয়েও পরিবহন চলছে। আমি যাত্রীদের নিজেদেরও সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে টার্মিনাল এবং বাসযাত্রা হতে পারে সংক্রমণ বিস্তারের কেন্দ্র।’
গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমি মালিক-শ্রমিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি বিআরটিএর সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিচ্ছি।'
এইউএ/জেডএ/এমকেএইচ