শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা জানেনই না চেম্বার অব কমার্সের কাজ কী

বিধান মজুমদার
বিধান মজুমদার বিধান মজুমদার , জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনেও ব্যবসায়ীদের কোনো কাজে আসেনি দি শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। মূলত জেলাটিতে শিল্প কল-কারখানা গড়ে না ওঠায় এমন দশা বলছেন স্থানীয় নেতারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ বছরেও ব্যাবসায়িক কার্যক্রম, উদ্যোক্তা উন্নয়ন বা সমস্যা সমাধানে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়নি সংগঠনটি। ফলে তারা জানেন না এই সংগঠনের কাজ আসলে কী?

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জেলার এই ব্যবসায়ী সংগঠনটির অবস্থা আরও শোচনীয়। সদস্যরা বলছেন- আগামীতে ভালো এবং নতুন নেতৃত্ব আসার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সংগঠনটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দি শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সর্বশেষ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হকের ভাই ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম ইসমাইল হক। ১৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন সালাম বেপারী, সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন আজাদ, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাবুল ও সহ-সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংগঠনটির সভাপতি একেএম ইসমাইল হক গা ঢাকা দেন। বর্তমানে তিনি প্রবাসে অবস্থান করছেন। তিনি চলে যাওয়ার পর সংগঠনটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তখন অবশিষ্ট ছিল মাত্র ৬৮ টাকা। এই অবস্থায় সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।

শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা জানেনই না চেম্বার অব কমার্সের কাজ কী

পরবর্তীতে সংগঠনটির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাবুলকে রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে সভাপতি বানান অন্যান্য সদস্যরা। এরপর থেকে শুধু নামেই টিকে আছে সংগঠনটি। তবে তিনি বলছেন, জেলায় এই সংগঠনটি থাকা বাঞ্ছনীয়, তাই রয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে এটির কোনো কার্যক্রম নেই। তবে আগামীতে ভালো নেতৃত্ব এলে এবং জেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে সংগঠনটি ব্যবসায়ীদের কাজে আসবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দি শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অফিসের একতলা ভবনটি শহরের মডেল টাউন এলাকায়। তবে এটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। দেখলে বোঝা যায়, অন্তত একবছরের অধিক সময় ধরে অফিসটি একবারের জন্যও খোলা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

সংগঠনটির সদস্য ও ব্যবসায়ী শামীম সরদার বলেন, আমি কমিটিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে ছিলাম। সভাপতি কিংবা সহ-সভাপতি আমাদের সাধারণ সদস্যদের নিয়ে কখনো সেভাবে মিটিং করেননি। আমরা আসলে জানিই না এই সংগঠনের কী কাজ। শুধুমাত্র সাড়ে আটশো টাকা করে চাঁদা দিতাম। আমাদের চেম্বারের সদস্য হওয়ার মূল কারণ ছিল- এটা ছাড়া এলজিইডিতে লাইসেন্স নবায়ন মিলতো না। তাই আমরা চেম্বারের সদস্য হয়েছিলাম। তাছাড়া এই সংগঠনের ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ দেখিনি। আমরা চাই আগামীতে চেম্বার অব কমার্সের পরিবর্তন আসুক। আমাদের সাধারণ সদস্যদের নিয়ে আগে বসুক, আমরা জানি এই সংগঠনের কাজ কী। সবাই যখন জানতে পারবে এই সংগঠনের এই কাজ বা এভাবে করলে আমাদের ব্যাবসায়িক উন্নতি হবে, তখন ব্যবসায়ীরাও পরামর্শ দিবে। আর সবার সমষ্টিগত পরামর্শ পেলেই সংগঠনটি এগোতে পারবে বলে আমরা মনে করি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম বেপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল জেলায় নতুন শিল্প উদ্যোক্তা বা শিল্প কারখানা তৈরি হলে তাদের মান উন্নয়ন করা। আমরা তাদের সার্টিফিকেট দিয়ে থাকি। ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধা, ভালো-মন্দ দেখে থাকি। তবে আমাদের জেলায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া না হওয়ায় সংগঠনের তেমন কাজ ছিল না। মূলত এই সংগঠনের কাজ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায়। তাছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের যেভাবে দিক নির্দেশনা দেয় আমাদের সেভাবে কাজ করতে হয়। ৫ আগস্টের পর আমাদের জেলায় এই সংগঠনটি কার্যত অচল রয়েছে। আগামীতে নির্বাচিত সরকার এলে তখন হয়ত কেউ এটির হাল ধরবে।

শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা জানেনই না চেম্বার অব কমার্সের কাজ কী

এ ব্যাপারে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাবুল বলেন, শরীয়তপুরে শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় এটির আসলে সেভাবে কাজ ছিল না। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসা করতে চেম্বারের সভাপতির সার্টিফিকেট লাগবে, তাই এই সংগঠনটি ছিল।

তিনি আরও বলেন, সংগঠনটির শেষ সভাপতি ইসমাইল হক চলে যাওয়ার পর সোনালী ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি আমাদের অ্যাকাউন্টে মাত্র ৬৮ টাকা অবশিষ্ট আছে। ব্যাংকের ম্যানেজার জানান অ্যাকাউন্টটি ক্লোজ হয়ে যাবে, তাই আমি নিজে থেকে ৩ হাজার টাকা জমা রেখে অ্যাকাউন্টটি বাঁচিয়ে রেখেছি। এখন বুঝেন আমাদের জেলার চেম্বারের অবস্থা।

তিনি বলেন, চেম্বারের সচিবের ৭৫ হাজার টাকা বকেয়া ছিল। আমি কোনোমতো দিয়েছি। এখন আর সচিব নেই। সদস্যরা কেউ চাঁদা দেয় না। কেউ সার্টিফিকেট নবায়ন করতে এলে তখন এক হাজার টাকা দেয়। এভাবে একটি সংগঠন চলতে পারে না। আগামীতে নির্বাচন কিংবা সিলেকশনের মাধ্যমে ভালো কোনো ব্যবসায়ী আমাদের সংগঠনটির হাল ধরলে এটি আবার পুনরুজ্জীবিত হবে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।